৪জিতে সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস, ফাইবারে ল্যাটেন্সি ৫ এমএস নির্ধারণ 

টেলিসেবায় নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ বিটিআরসি’র

৪০ সেকেন্ডে মোবাইলের ৯০ শতাংশ এবং  ৬ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে ফাইবার সমস্যার সামাধান

৩১ আগষ্ট, ২০২৫  
৩১ আগষ্ট, ২০২৫  
টেলিসেবায় নতুন  মানদণ্ড নির্ধারণ বিটিআরসি’র

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ সেবার জাতিয় মান হিসেবে ফোরজির সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ এবং ডেটা সেবায় আপলোড গতি সর্বনিম্ন২ এমবিপিএস নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি। এছাড়াও সেবার মান উন্নয়নে গ্রাহক অভিযোগ সমাধানে কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি। নেটওয়ার্ক-সম্পর্কিত নয় এমন অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে শতভাগ সমাধান করতে হবে। এছাড়া গ্রাহকসেবা সেন্টারে আসা ৯০% কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং সব কল ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে রিসিভ করতে হবে।

সেবায় শহরের পাশাপাশি প্রান্তিক অঞ্চলকেও গুরুত্ব দিয়ে গড় ব্যবহারকারী ডাউনলোড গতি নেটওয়ার্ক পর্যায়ে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৫ এমবিপিএস এবং জেলা পর্যায়ে ২ দশমিক ৫ এমবিপিএস রাখার সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। এজন্য এনটিটিএন অপারেটরদের ক্ষেত্রে ডেটা হারানো সর্বোচ্চ ০.০১%, ল্যাটেন্সি ৫ এমএস এবং সংযোগের জিটার ৩ এমএসের এর মধ্যে রাখতে হবে। ফাইবার নেটওয়ার্কে সেবার সমস্যা মেট্রো (মহানগর) এলাকায় ৪ ঘণ্টা এবং গ্রামীণ এলাকায় ৬ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে হবে।

টেলিকম সেবার মান নিশ্চিত করতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা একটা আন্তর্জাতিক চর্চা বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ কমিশন সভায় কোয়ালিটি অফ সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালায় সংশোধনীতে এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, নিম্নমানের বলে ঘোষণা দেবার পরে আমরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি নতুন কোয়ালিটি অফ সার্ভিস বেঞ্চমার্ক করেছি। এটি গত সপ্তাহের বিটিআরসি কমিশন মিটিংয়ে মোবাইল অপারেটর, এনটটিএন এবং আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য পাশ হয়েছে। নতুন এই কোয়ালিটি অফ সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা মতে ফোরজির সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে। তদারকি বাড়াতে বিটিআরসি প্রতি মাসে আগের মাসের নেটওয়ার্ক পারফর্মেন্স এবং হেলথ চেক করবে যা সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হবে।




তিনি আরো বলেছেন, এতে ড্রাইভ টেস্ট মানদণ্ডে অপারেটরদের ফোরজি সেবার সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস থাকতে হবে। কমানো হয়েছে কলড্রপের সর্বনিম্ন হার। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে সেবার বিভিন্ন মানদণ্ড সূচক। এসব মানদণ্ডে অপারেটরদের বাধ্যতামূলকভাবে মাসিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।  আগের কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্ক খুব বাজে ছিল যা সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত করা হয়েছে। শিগগির হালনাগাদ এ নির্দেশিকা জারি করা হবে।


ফয়েজ তৈয়্যব মনে করেন, বাংলাদেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফোরজিতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ করেনি। ফলে সেবার মান নিম্নমুখী। এর উত্তরণে নতুন লাইসেন্স পলিসিতেও 'লাইসেন্স অব্লিগেশন' এবং কোয়ালিটি অফ সার্ভিসের কথা বলা হয়েছে। এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) বেঞ্চমার্ক টেলিযোগাযোগ খাতে নাগরিকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে সেবাদাতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে সেবার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

তার ভাষায়, এই উদ্যোগের মাধ্যমে অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে দুর্বল এলাকাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।বাধ্যতামূলক মাসিক রিপোর্টিংয়ের ফলে অপারেটরদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে সেবার মান বজায় রাখতে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও শহরতলির এলাকায় যেখানে এখনও দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ঘনঘন কল ড্রপ নিয়ে অভিযোগ বেশি।

সংশোধিত এই কিউওএস নীতিমালায় বলা হয়েছে, - নেটওয়ার্ক লেভেল (পর্যায়ে) এ কল সেটাপ সাকসেস রেটের হার অন্তত ৯৯% হতে হবে, আর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তা ৯৮%। একইভাবে কলড্রপের হার টুজি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ১% এবং উপজেলা পর্যায়ে ১ দশমিক ৫%-এর মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। এছাড়াও ডেটা সেবায় ফোরজি সংযোগ সফলতার হার ৯৯% এবং জেলা পর্যায়ে ৯৮ দশমিক ৫% থাকতে হবে।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, ড্রাইভ টেস্টে ভয়েস সেবায় কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৮% বা তার বেশি, কলড্রপ (অটোমোড) ২%-এর মধ্যে এবং ভোল্টি (ভয়েস ওভার এলটিই প্রযুক্তি)-এর জন্য গড় ব্যবহারকারী মান সূচক ন্যূনতম ৩.৫ হতে হবে। পাশাপাশি ডেটা সেবায় ডাউনলোড স্পিড ‍সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস এবং আপলোড ২ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেবার মান তদারকিতে মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী অপারেটরদের এখন থেকে প্রতি মাসে তাদের নেটওয়ার্কের মান সংক্রান্ত মূল সূচক (কেপিআই ) জমা দিতে হবে। এসব সূচক মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অ্যাক্সেসিবিলিটি, রিটেইনেবিলিটি ও নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রিটি।

এরমধ্যে অ্যাক্সেসিবিলিটি (নেটওয়ার্কে প্রবেশ ও কল সেটআপ) সূচকগুলোর মাধ্যমে বোঝা যাবে গ্রাহকরা কতটা সফলভাবে নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারছেন এবং কল সেটআপ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কল সেটআপ সাকসেস রেট (টুজি ও ফোরজি-ভোল্টি), পেজিং সাকসেস রেট, আর ইআরএবি সেটআপ সাকসেস রেট। এ ছাড়া, যেখানে এই হার ৯০% বা ৭০%–এর নিচে নেমে আসে, সেইসব খারাপ সেলগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে।

রিটেইনেবিলিটি (সংযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা) সূচকগুলোতে দেখা হবে কল বা ডেটা সেশন শুরু হওয়ার পর তা কতটা স্থিতিশীল থাকে। এর মধ্যে রয়েছে কলড্রপ রেট (২জি ও ৪জি), ভোল্টি অস্বাভাবিক বিচ্ছিন্নতার হার, এলটিই নন-রিটেইনেবিলিটি, এসআরভিসিসি সাকসেস রেট এবং হ্যান্ডওভার সাকসেস রেট।

নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রিটি (নেটওয়ার্কের সার্বিক দক্ষতা-ক্ষমতা ) এর মাধ্যমে দেখা হবে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতি বেস স্টেশনে এলটিই পিআরবি (ফোরজি রেডিও নেটওয়ার্ক রিসোর্স) ব্যবহার হার, ব্যবহারকারীর আপলিঙ্ক থ্রুপুট (এমবিপিএস) এবং সিকিউআই/আরএসআরকিউ মান অনুযায়ী ‘খারাপ স্যাম্পল’-এর শতকরা হার।

বিটিআরসি সব সূচকের ফলাফল মাসভিত্তিক গড় করে নেটওয়ার্ক, জেলা ও উপজেলা স্তরে আলাদা আলাদাভাবে জমা নিবে। পাশাপাশি, সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা ৫০টি সেলের আলাদা তালিকা জমা দিতে হবে, যেখানে অ্যাক্সেসিবিলিটি ও রিটেইনেবিলিটি সূচক দুর্বল। এখানে ইন্টারনেট সেবায় লোকাল ট্র্যাফিকের সংযোগ সময় সর্বোচ্চ ২৫ এমএস, ডেটা হারানোর হার ১%-এর মধ্যে এবং নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা ৯৯% বা তার বেশি হতে হবে। গ্রাহকের প্রান্তে ডাউনলোড-আপলোড স্পিড সাবস্ক্রাইব করা গতির অন্তত ৯৫% নিশ্চিত করতে হবে।

সংশোধিত এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনি এবং এনটিটিএনদের জন্য করা হয়েছে।ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনিতে ফিক্সড টেলিফোন সেবায় কলড্রপ ১%-এর মধ্যে, কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৯%-এর বেশি এবং কল সংযোগ সময়) ৬ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।