আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের বাংলাদেশী যুগলের ১১২টি পর্নো ভিডিও ব্লক

দেশে অবস্থান করেই আন্তর্জাতিক পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম শীর্ষস্থানে থাকা সেই আলোচিত যুগলকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। সংস্থাটির এলআইসি এবং সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট ২০ অক্টোবর, সোমবার ভোর সাড়ে ৩টায় বান্দরবান জেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে। তাদের অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অন্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে থাকা তাদের ১১২টি পর্নো ভিডিও বাংলাদেশ থেকে ব্লক করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলে মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও বৃষ্টি (২৮)। আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামে আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়ায়। বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
বিকেলে মালিবাগের সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের থেকে মোবাইল, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ পর্নো ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুসারে মামলা হয়েছে। সিআইডি বলছে, ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয়। এক বছরে তাদের প্রকাশিত মোট ১১২টি ভিডিও ২ কোটি ৬৭ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী পারফরমারদের মধ্যে তাদের অবস্থান অষ্টম বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে।
এক প্রশ্নের জবাবে জসীম উদ্দিন খান বলেন, অনলাইন জগৎটা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে ইতিমধ্যে প্রকাশিত ১১২টি পর্নো ভিডিও যাতে বাংলাদেশ থেকে কেউ দেখতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কাজের মাধ্যমে তারা কী পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন, সেই অর্থ কোন মাধ্যমে দেশে এনেছেন, সেসব জানার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নতুন করে যাঁদেরকে যুক্ত করেছেন, তাঁদের কত টাকা দিতেন, কীভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন, সেটিও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই যুগল বিলাসী জীবন যাপন করতেন জানিয়ে জসীম উদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও অনলাইনে রয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার বহু ছবি। বিষয়টি সামাজিক ও নৈতিকভাবে উদ্বেগজনক।
সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, শুধু নিজেরাই পর্ন ভিডিও তৈরি করা নয় বরং আরও মানুষদেরকে এ জগতে সম্পৃক্ত করার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই যুগল পর্ন-তারকা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব তথ্যেই উঠে আসে, গ্রেফতার মুহাম্মদ আজিম ও বৃষ্টি মাত্র এক বছরেই পর্নতারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে এবং ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে তাদের অবস্থান অষ্টম।
তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, একাধিক আন্তর্জাতিক পর্নো ওয়েবসাইটে ভিডিও আপলোড করতেন তারা। এভাবে খোলাখুলি প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেও তারা প্রচারণা চালাতেন। এসব প্রচারণায় ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অন্যদের প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করতেন। আগ্রহীরা নতুন ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নতুনদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করাও ছিল তাদের কাজ। যেমন- টেলিগ্রাম চ্যানেলে নতুন ক্রিয়েটর যুক্ত করলে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে বলে তারা বিজ্ঞাপন দিতেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও অনলাইনে রয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনধারার বহু ছবি। বিষয়টি সামাজিক ও নৈতিকভাবে উদ্বেগজনক এবং একই সঙ্গে বেআইনি হওয়ায় সিআইডির এলআইসি এবং সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট দ্রুত এই যুগলকে গ্রেফতার করে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।