অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক.আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণে আজ শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধ্যাপক ইসলামের পরিবারের আয়োজনে এই সভায় তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবন, গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ সকলকে স্বাগত জানান, প্রয়াত পিতার জন্য ক্ষমা ও দোয়া চান। এরপর তিনি সঞ্চালক ড. হাসিব ইরফানুল্লাহকে পরিচয় করিয়ে দেন। কুরআনিক স্কুল সোসাইটির শিক্ষক ও সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম পবিত্র কোরআন থেকে সূরা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে ড. হাসিব ইরফানুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খানের ও জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবিদুর রহমানের শোক বার্তা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অধ্যাপক ইসলামের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং দেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. শমসের আলী তাঁর বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন বলেন, "তাঁর মতো প্রজ্ঞাবান বিজ্ঞানী আমাদের সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ ছিলেন।" সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আজাদ চৌধুরী বলেন, "অধ্যাপক ইসলাম ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী শিক্ষক ও গবেষক। তাঁর গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মিহির লাল সাহা বলেন, "স্যার ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন, তা আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে। তিনি যে মানের শিক্ষক ছিলেন, আমরা হয়তো স্যারকে সেভাবে যথাযথ সম্মান জানাতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। বিসিএসআইআর-এর সিনিয়ার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান টিস্যু কালচার প্রযুক্তির উন্নয়নে অধ্যাপক ইসলামের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং অধ্যাপক ইসলামের খুবই প্রিয় নজরুল সঙ্গীত শিল্পী অধ্যাপক নাশিদ কামাল অধ্যাপক ইসলামকে স্মরণ করে নজরুল সংগীতের কিছু লাইন পরিবেশন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের শিক্ষকগণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. রফিকুল রহমান অধ্যাপক ইসলামের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাখাওয়াত হোসেন এবং বিএপিটিসিবি-এর প্রতিনিধি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও আইইউবির ড. সাবরিনা এম ইলিয়াস অধ্যাপক ইসলামকে তাদের শ্রদ্ধা জানান।
বোটানিক্যাল সোসাইটি ও অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞান শিক্ষকরাও অধ্যাপক ইসলামকে স্মরণ করেন। BINA ময়মনসিংহের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ইসলামের পিএইচডি ছাত্র ড. সামাদ তাঁর স্মৃতিচারণ করেন। শেষে ড. হাসিব ড. পারভেজ হারিসের লিখিত বার্তা পাঠ করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির হাসান এবং এএসআই স্কুল অব লাইফের সমন্বয়ক মোর্শেদা আক্তার মীম অধ্যাপক ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
সভায় অধ্যাপক ইসলামের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ ইসলাম বলেন, তাঁর পিতা ছিলেন একজন স্নেহময় জনক এবং একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। অধ্যাপক ইসলামের একমাত্র কন্যা, ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম তাদের পিতার স্মৃতিচারণ করেন। অধ্যাপক ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালিদ ইসলাম প্রয়াত পিতার জন্য দোয়া চান। সবশেষে অধ্যাপক ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম দোয়া পরিচালনা করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইসলামের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট’স গোল্ড মেডেল ইন অ্যাগ্রিকালচার (১৯৮৪), একুশে পদক (শিক্ষা, ১৯৮৬), বিএএস গোল্ড মেডেল ইন বায়োলজি (১৯৮৭), বাংলাদেশ বোটানি অ্যাসোসিয়েশন স্বর্ণপদক (১৯৯৭) এবং জিএনওবিবি প্রদত্ত লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৭)।