কেমন হবে তিন ধাপের লাইসেন্স?

‘টেলিকম খাতে কনফ্লিক্ট নয়, কমপ্লিমেন্ট’; সেবায় ‘ভার্টিক্যাল নয়, হারাইজন্টাল’

১৯ এপ্রিল, ২০২৫  
২০ এপ্রিল, ২০২৫  
‘টেলিকম খাতে কনফ্লিক্ট নয়, কমপ্লিমেন্ট’; সেবায় ‘ভার্টিক্যাল নয়, হারাইজন্টাল’

গ্রাহকের স্বার্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবং ডিজিটাল সেবাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গড়তে’ চায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু নেটওয়ার্কে কেন্দ্রবিন্দু ট্রান্সমিশন। এরওপর সব কিছু নির্ভর করে। এখানে মোবাইল অপারেটরদের সুযোগ দেয়া হলেও কেবল জোড়াতালিদিয়েই তারা চলছেন। এই নেটওয়ার্কটি আলাদা করতেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করেনি এনটিটিএনরা। ফলে কানেক্টিভিটির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বিশাল সাম্রাজ্যের দেশের ইন্টারনেট সেবার পথ কন্টকাকীর্ণ হয়েছে বলে মনে করেন সংস্থা প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী। আর ২০১০ সালে যখন এই খাতের দায়িত্ব বিটিআরসি’র কাছ থেকে সরকারের হাতে চলে গেছে তখনই ‘স্বজনপ্রীতি’র মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও সেবা তৈরি করে এখন জটিলতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তার ভাষায়, ‘হেভিক্যাপেক্সের এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসএমই  বা এমএসএমই উদ্যোক্তাদের অনেকভাবে সম্পৃক্ত করা যায়। তার একটা হচ্ছে আইএসপি। এই আইএসপিরা একসময় রিজিওনাল ছিলো। তারপরে আমরা এটাকে ক্যাটাগরি করে ফেললাম। তারপর একটা আইএসপিএবি অ্যাসোসিয়েশন করলাম। তারপর এই ব্যবসার জন্য আইএসপিএবি’র লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করলাম। টেলিকমিউকেশনের কোথাও এই বাধ্যতা নেই। পুরো জিনিসটাকেই পলিটিসাইজ করতে এটা করা হয়েছিলো। পলিটিসাইজ করে এর একটি সিগনিফিকেন্ট অংশ, পাড়া-মহল্লা ভিত্তিক লাইসেন্স রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়েছে। এখানে লাইসেন্সের নাম্বার অব লিমিটের কারণে এখন লাইসেন্স আপডেট করা যাচ্ছে না। তাই আমরা আগামীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্সই বাতিল করে দিবো। থানা পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্যবসাকে কলসেন্টারের মতো রেজিস্ট্রেশন করে ব্যবসা করতে পারবে।’    

এজন্যই একটি সংস্কারের মাধ্যমে ফিক্সড ও মোবাইল টেলিকমিনিউকেশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব  কমানো নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে বলে জানান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই কোনো ক্যাটাগরির মধ্যে যেন আন্তঃদ্বন্দ্ব তৈরি না হয়। সমন্বিতভাবে একটা ক্যাটাগরি আরেকটা ক্যাটাগরির সঙ্গে কোলাবরেট করতে পারবে এমন জায়গায় আসতে চাই। কনফ্লিক্ট নয় কমপ্লিমেন্ট করবে।’  

এসময় টেলিকমিউনিকেশনে বেসিক গাইডলাইন পরিবর্তন করে ‘ডিডব্লিউডিএম’-কে লাইসেন্সের অংশ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিটিআরসি প্রধান বলেন, ‘২০২১ সালে লাইসেন্স ম্যানুপুলেট করে এনটিটিএন এর জন্য মোবাইল অপারেটরদের আটকে দেয়া হলো। উদ্দেশ্য তারা যেন ডার্ক ফাইবার ব্যবহার না করে। তাই আমরা ২০২১ সালের বাধাটা তুলে দিয়েছি। কিন্তু এতে এমএনওদের খুশী হয়ে যাওয়ার কিছু নেই। আগামী এক বছর পর এমএনওরা কোনো ট্রান্সমিশন ফাইবারের মালিক থাকতে পারবে না। অর্থাৎ এনটিটিএন এমএনও কমপ্লিমেন্টারি হতে হবে। তাই এখন আমরা তিন ক্যাটাগরির লাইসেন্স নিয়ে ভাবছি। এর একটা ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি। এর মধ্যে আইটিসি, সাবমেরিন ও আইআইজি, আইজিডব্লিউ একটি লাইসেন্সের অধীনে চলে যাবে। এরপরে থাকবে ন্যাশনাল কানেক্টিভিটি। এর মধ্যে থাকবে এনটিটিএন, টাওয়ারকো’র মতো প্রতিষ্ঠান থাকবে। সর্বশেষে থাকবে অ্যাকসেস লেভেল ক্যাটাগরি। এখানে কিছু ভাগ থাকবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাগ হবে ফিক্সড ও মোবাইল সেবা। এদের মধ্যে কোনো তুলনা চলবে না। তাই এখানে একটা বাধা থাকবে। ফলে যারা ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দেবে তারা ওয়্যারলেস দিতে পারবে না। আর যারা ওয়্যারলেস সেবা দেয় তারা ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে পারবে না। তবে বিজনেস টু বিজনেস যদি কোনো কথা হয় তা হতে পারে।’  

ইন্টারনেটের দাম কমাতে আইএসপিদের স্বপ্রণোদনাকে স্বাগত জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী আরও বলেন, এক দেশ এক রেট নিয়ে আমরা আবার কাজ করবো। ইতিমধ্যেই আমরা অ্যাক্টিভ শেয়ারিং নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছি। ভাবছি, লাস্টমাইল সল্যুশন শুধু অ্যাকসেস লেয়ারে থাকবে। তবে লাস্টমাইল মানে তিন কিলোমিটার। ৫০ কিলোমিটার নয়। এজন্য আগামী সপ্তাহে আমরা নেটওয়ার্ক টপোলজি নিয়ে পাবলিক কলসান্টেশন শুরু করবো। এক্ষেত্রে সার্ভিসকে ভার্টিক্যাল (লম্বালম্বি) থেকে হরাইজনটাল (আড়াআড়ি) মডেলে নিয়ে আসতে চাই। এটা হলেই সার্ভিস ইন্টিগ্রেটেড করা সম্ভব হবে।  

শনিবার আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি অডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন- টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মোস্তফা মামুন হোসেন, সুমন আহমেদ সাবির; আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদ নাজমুল করিম ভূঁইয়া, এমটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার; টেলিটকের এজিএম সাইফুর রহমান খান, আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঞা ও ফাইবার এট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী। 

টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসদুজ্জামান রবিন। এতে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন টিআরএনবির সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমীন দেওয়ান।