বাংলাদেশ প্রথম এআই আর্ট-এ-থন অনুষ্ঠিত

১৭ এপ্রিল, ২০২৫  
১৭ এপ্রিল, ২০২৫  
বাংলাদেশ প্রথম এআই আর্ট-এ-থন অনুষ্ঠিত

 মানুষ ও কৃত্রিমবুদ্ধিমত্ত্বার যৌথ অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করার অভিপ্রায়ে প্রথম বারের ঢাকায় বসেছিলো এআই-আর্ট এ থন। বৃহস্পতিবার  (১৭ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয় হ্যাকাথনের গালারাউন্ড। এতে অংশ নেন বাংলাদেশী শিল্প অনুশীলনকারী, শিল্প পেশাদার, শিক্ষার্থী (শিল্পী, নির্মাতা, স্থপতি, গ্রাফিক ডিজাইনার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং অন্যান্য ভিজ্যুয়াল শিল্পী, প্রযুক্তিবিদ এবং এআই প্রেমীরা।   

ইউএনডিপি বাংলাদেশে এবং আইসিটি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি)  যৌথ প্রযোজনায় ঢাকায় রয়েল নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হ্যাকাথনে দুটি বিভাগে জমা পড়া ৩৮০টি আইডিয়ার মধ্যে ২১টি প্রকল্প গালা রাউন্ডে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দুইটি দলকে উইনার ও অপর দুইটিকে রানার্সআপ হিসেবে মোট ৬ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। 

এই রাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তাইয়্যেব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “তথ্য সুরক্ষা থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে আমরা কাজ করছি। একই সাথে বাংলাদেশের নৈতিকতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি দৃঢ় এআই নীতি প্রণয়নের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েঠে। এআই ক্রমবর্ধমানভাবে সৃজনশীল খাতের সাথে মেলবন্ধন রচনার পাশাপাশি আমাদের জাতিগত কণ্ঠস্বর এবং সাংস্কৃতিক আখ্যান সংরক্ষণ নৈতিক মান বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে। সৃজনশীল সামাজিক সম্প্রীতির উপর গভীর প্রভাব রাখবে। মূল্যবোধকে সমন্বিত রেখেই এআই পরিচালনায় সৃজনশীল ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরো বলেন, ফ্রিল্যান্সিং এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তার মতো প্রযুক্তি-চালিত পেশাগুলি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করছে এবং আমরা এই গতিকে উৎসাহিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা যখন এআই  নীতির প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তখন আমরা আমাদের প্রযুক্তি এবং সৃজনশীল সম্প্রদায়গুলিকে তাদের অন্তর্দৃষ্টি সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার জন্য আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের অনন্য সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে প্রতিফলিত করে এবং বৃহত্তর জনস্বার্থে প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিমূলক, নীতিগত এআই কাঠামো তৈরিতে সকলের অংশগ্রহণ কামনা করি। 

অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার বলেন, ‘ব্যাপক ভুল তথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য অপব্যবহারের এই যুগে, একটি জাতির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সংরক্ষণ গভীর তাৎপর্য বহন করে।  এআই দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলে, নৈতিক উদ্ভাবনকে আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অভিভাবক হিসেবে কাজ করতে হবে। আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের মাইলফলক - কেবল প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া নয় বরং একটি অগ্রণী উদ্যোগের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এআই-কে প্রামাণিক এবং দায়িত্বশীলভাবে প্রতিফলিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে এআই -এর সাথে নীতিশাস্ত্রের কিংবা সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার যোগসূত্রতার বিপরীতে বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, যেহেতু এআই ছাত্র এবং পেশাদারদের জন্য একটি সাধারণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তাই এটিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার পরিবর্তে এটিকে নির্দেশনা দেওয়া এবং প্রশ্ন করা অপরিহার্য। জাতীয় এআই আর্ট-এ-থন এই চ্যালেঞ্জ সেই সীমাবদ্ধতা এবং অপব্যবহার রোধে নৈতিক ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝতে উৎসাহিত করবে বলে আশা রাখি। 

ঢাকার রয়েল নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স, ম্যারিয়ান রাবে নেভেলসরুড বলেন, ‘যখন এআই দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, তখন এর বিকাশকে কী রূপ দেয় তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্ট-এ-থন আমাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং বহুত্ববাদকে আমরা কীভাবে এআই-এর সাথে প্রশিক্ষণ এবং যোগাযোগ করি তার সাথে একীভূত করে চিন্তাভাবনা করে এটিকে মোকাবেলা করে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সঠিক প্রতিনিধিত্ব প্রাপ্য—শুধু মানুষ নয়, যন্ত্রের মাধ্যমেও। এই দায়িত্ব নিয়ে, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে AI আমাদের পরিচয়ের বৈচিত্র্য এবং গভীরতা প্রতিফলিত করে, এটিকে আমাদের সংজ্ঞায়িত নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে শেখায়।’


অনুষ্ঠানে এই উদ্যোগের একটি সংক্ষিপ্ত পটভূমি উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল বিন মাজিদ। প্রকল্প পরিচালক হোসেন বিন আমিনের সভাপতিত্বে আর্ট-এ-থনে যোগ দেন সিনিয়র গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট শীলা তাসনিম হক এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের যোগাযোগ প্রধান মো. আব্দুল কাইয়ুমসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।