দেশের যুব উদ্ভাবকদের উদ্ভাবনী সমাধানকে আরও এগিয়ে নিতে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে সেভ দ্যা সিলড্রেন। এ লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে যুব-নেতৃত্বাধীন ইনোভেশন ল্যাব (ওয়াইআইএল) ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উদ্ভান প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে ৫টি উদ্যোগ। এগুলো হলো- বনলতা, ড্রিম পাওয়া. ক্র্যাফ্টিক ও অন্বেষা।
যুব নেতৃত্বাধীন ও জলবায়ু–সংবেদনশীল অঞ্চলের উদ্ভাবনকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে সেইভ দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগে এবং এটুআই-এর সহযোগিতায় ২৬ নভেম্বর, বুধবার রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের অন্যতম বড় এই ‘গ্রিন ইনোভেশন ফেস্ট’। স্থানীয় পর্যায়ের সবুজ উদ্ভাবন, ইকো–ফ্রেন্ডলি ব্যবসায়িক সমাধান, টেকসই প্রযুক্তি এবং প্রান্তিক যুব উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য ও প্রোটোটাইপ প্রদর্শনের মাধ্যমে দিনব্যাপী এ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
৬ মাসব্যাপী চলমান ধারাবাহিক সহায়তার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই বিজয়ী উদ্যোগ গুলোর নাম ঘোষণা করা হয়। উদ্যোগগুলোর মধ্যে -
বনলতা: চট্টগ্রামের পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় পরিত্যক্ত নারিকেলের ছোবড়া সংগ্রহ করে কৃষি, বাগান ও শহুরে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য কোকোপিটে রূপান্তর করছে।
ড্রিম পাওয়ার: ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী সৌরচালিত মশা নিধন যন্ত্র তৈরি করছে।
ক্রাফটিক: শিল্প কারখানার চামড়ার বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে ব্যাগ, পার্স ও গয়না তৈরি করছে।
অন্বেষা: কল্যাণপুর বস্তি এলাকায় নারীদের জন্য এক জায়গায় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার কেন্দ্র তৈরি করছে।
ড্রাই নিউট্রি: রংপুরের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অপুষ্টি ও আয়োডিন ঘাটতি মোকাবিলায় শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিগুণসম্পন্ন পাউডার ‘ছাতু’ তৈরি করছে।
অনুষ্ঠানে জনানো হয়, শ্রমবাজারে ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবদের হার ৩৬ শতাংশ, এই বয়সভুক্ত কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ৬৮ লাখেরও বেশি। তাই ভবিষ্যৎ সুযোগ সৃষ্টি ও উদ্ভাবনে তরুণদের ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।
আয়োজকরা জানান, চারটি বিভাগ ও ১৪ জেলার নির্বাচিত যুব উদ্ভাবকরা সরকারি দফতর, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও, বেসরকারি খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সামনে তাদের নিজ নিজ ব্যবসায়িক উদ্ভাবন উপস্থাপন করেছেন। গত ৫ বছরে ওয়াইআইএলের সহায়তায় ২৪টি ব্যবসায়িক উদ্যোগ কাজ করে যাচ্ছে এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। ২০২৩ সাল থেকে পরিবেশবান্ধব ও সবুজ উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে টেকসই ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত বলেন, “তরুণরাই আগামী দিনের ভাবনাচিন্তা করবে, উদ্ভাবন করবে এবং ব্যবসাকে প্রসারিত করবে। আমাদের দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এ সকল তরুণ উদ্ভাবকদের পাশে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। আজকের প্রজন্ম সামাজিকভাবে সচেতন এবং পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনের প্রতি আগ্রহী। তাদের এই উদ্যোগগুলো পরিণত হতে পারে সফল ব্যবসায়, যা তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, “আমি আশাবাদী যে যুবরাই নেতৃত্ব দেবে। গত ৩ দিনে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং বুঝেছি, এটাই কেবল শুরু। আমি নিজেই এর প্রমাণ যে, সফলতা সম্ভব। উদ্ভাবন ও কাজের উন্নয়নে মান ধরে রাখতে হবে। আশা করি, আপনারা আগের মতো বাধার মুখে পড়বেন না, কারণ আজ আপনারা পেয়েছেন সহায়ক প্ল্যাটফর্ম। উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব নতুন সুযোগ তৈরি করা এবং দেশীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দেওয়া।”
এদিকে অনুষ্ঠানে পলিসি ডায়ালগ সেশনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মোহাঃ আব্দুর রফিক। তিনি সবুজ উদ্যোগের নীতি–পরিবেশ, সরকারি প্রণোদনা, উদ্ভাবনে বিনিয়োগ কাঠামো এবং তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য জাতীয় স্তরে সমন্বিত সহায়তা নিশ্চিত করার রোডম্যাপ তুলে ধরেন।
আয়োজনে এটুআই-এর পক্ষ থেকে জুরি বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন মোঃ নাহিদ আলম, ইনোভেশন ক্লাস্টার হেড এবং তৌফিকুর রহমান, হেড অফ ইনোভেশন ল্যাব। তাঁরা প্রতিটি উদ্ভাবনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, পরিবেশগত প্রভাব, বাজার–সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ স্কেলআপের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে উদ্ভাবকদের জন্য গঠনমূলক মতামত প্রদান করেন।
ডিবিটেক/বিটি/ইকে