ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছে দেশের প্রথম এআই সম্মেলন

৮ মে, ২০২৫  
৮ মে, ২০২৫  
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছে দেশের প্রথম এআই সম্মেলন

রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছে দেশের প্রথম এআই সম্মেলন। দেশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, টেক এআই বিশেষজ্ঞনীতিনির্ধারক উদ্ভাবকদের নিয়ে চলছে সম্মেলনটি। এআই নিয়ে আগ্রহী নিবন্ধিতদের নিয়ে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার নানা দিক নিয়ে চারটি সেশনে এই সম্মেলনে এআই এর ইনসাইট তুলে ধরেন বক্তারা। ৪টি কিনোট সেশন, ২টি প্যানেল আলোচনা, ৫টি ইনসাইট সেশন, ২টি কেস স্টাডি ১টি ফায়ারসাইড চ্যাটের আলোচনায়। পাশাপাশি ৫টি ব্রেকআউট সেশনে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, ফিনটেক ও শিল্পখাতে এআই অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক আলোচনা করেন। সম্মেলনে এআই চাকরি, শিল্প-ব্যবসা এমনকি প্রাত্যহিক জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তা তুলে ধরা হয়। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও করণীয় উঠে এসেছে বিভন্ন প্যানেল প্যানেল আলোচকদের কণ্ঠে।  

বৃহস্পতিবার সকালে দিনব্যাপী সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ডিন মোহাম্মাদ মজিবুল হক। এরপরেই বক্তব্য রাখেন আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান রিভ গ্রুপের গ্রুপ সিইও রিয়াজুল হাসান।  

এর আগে আয়োজন নিয়ে দেয়া বক্তেব্যে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি খাতকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা, প্রশাসন থেকে দৈনন্দিন জীবনসবখানেই এআই এনে দিচ্ছে দ্রুত সমাধান, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রগতির অশেষ সম্ভাবনা। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আমাদের বড় একটি দায়িত্বও রয়েছেএর সচেতন ব্যবহারসহ , সবার অংশগ্রহণের দিকটিও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আজকের এই সম্মেলন কেবল একটি আলোচনা নয়এটি ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরির একটি সম্মিলিত প্রয়াস। সামিটের পাশাপাশি আমরা  হ্যাকাথন আয়োজনেও সক্ষম হয়েছি। এই আয়োজনে দেশের তরুণ উদ্ভাবকেরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতের জন্য এআই ভিত্তিক সমাধান তৈরীতে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করেছে।

সম্মেলনে এআই ব্যবহারে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোঃ ইউসুপ ফারুক। জাতি গঠনে এআই নীতিমালা; নীতিবোধ এবং প্রস্তুতি বিষয়ক প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউট অফ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। এতে আলোচক ছিলেন- অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ ফাউন্ডার অ্যান্ড ম্যানেজিং পার্টনার রাহাত আহমেদ, গ্রামীণফোন লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইয়াসির আজমান’; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার মাহমুদ হোসেন।

দুপুরে ইনসাইট সেশনে হাইপ বনাম বাস্তবতা: বাংলাদেশে এআই এর দৃশ্যকল্প তুলে ধরেন বাংলাভাষায় এআই নিয়ে সিরিজ বইয়ের লেখক রকিবুল হাসান। উপস্থাপনায় তিনি তুলে ধরেন, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষকে যদি সরকারি এবং বেসরকারি সার্ভিস নূন্যতম সময়ে যদি দিতে হয়, তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া কোন গতি নেই। বর্তমানে এ আই ইনফারেন্সিং খরচ এতটাই কমে যাচ্ছে যে লোকাল ডাটা দিয়ে দেশের ভেতরে সিদ্ধান্ত দিয়ে সরকারকে চালানো সম্ভব। সরকারি সিদ্ধান্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দেয়া সম্ভব যেখানে প্রসেস অটোমেশন নিয়ে সরকার কাজ করেছে আগে।

দ্বিতীয় সেশনে বিশ্বজুড়ে এআই রূপান্তরের ফলে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির ওপর চাপ ও সম্ভাবনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএমিইডি হেলথ প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক খান্দকার এ মামুন। এর পর সম্মেলনের প্রথম কেস স্ট্যাডি তুলে ধরেন এডটেক স্টার্টআপ শিখো’র  প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী শাহির চৌধুরী। 

এছাড়াও বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়েছেন প্রাভা হেলথ সিইও মুহাম্মদ আব্দুল মতিন ইমন; এন্টারপ্রাইজ টেক লিমিটেড ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও মোহাম্মদ ওলি আহাদ, ইয়েল ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল এথিক্স সেন্টারের ডিরেক্টর লুসিয়ানো ফ্লোরিডি; ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড প্রেসিডেন্ট এম মনজুর মাহমুদ,ইস্টার্ন ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিওও ওসমান এরশাদ ফয়েজ; ভিসা’র কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, নেপাল অ্যান্ড ভুটান) সাব্বির আহমেদ; মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের চিফ ডিজিটাল অফিসার খালিদ হোসাইন; পিডব্লিউসি কান্ট্রি ম্যানেজিং পার্টনার শামস জামান; অ্যাকসেনচার এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর (পার্টনার অ্যান্ড কানাডা লিড - ডেটা অ্যান্ড এআই) কৃষ ব্যানার্জি; মানুলাইফ ফাইন্যান্সিয়ালের ভিপি অ্যান্ড গ্লোবাল হেড অফ ডেটা, ওয়েলথ অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) সাদিক সাইয়েদ; কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর অফ দ্য সাইবার সিকিউরিটি প্রোগ্রাম ফ্রেডেরিক স্কল, বেসিস সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির প্রমুখ

আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে  এআই-এর বর্তমান বাস্তবতা, কৃষি রূপান্তর, কমিউনিটি ক্ষমতায়ন, ব্যবসা উদ্ভাবন, এবং নৈতিক প্রযুক্তি ডিজাইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো। এছাড়াও শিক্ষাখাতে এআই এর মাধ্যমে সহজলভ্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিসহ এআই-এর কারণে উদ্ভূত নৈতিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গোপনীয়তা ও ক্ষমতার ভারসাম্যের মতো বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। উঠে এসেছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে এআই-এর ভূমিকা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এআই-এর অগ্রগতি এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনা,  পরিবর্তিত এআই পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর করণীয় এবং কৃষি, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের মতো খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনের শক্তিকে কাজে লাগানোর মতো প্রাসঙিক বিষয়াবলি।