আগামী এক বছরে এআই ব্যবহার করবে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ

৮ মে, ২০২৫  
৮ মে, ২০২৫  
আগামী এক বছরে এআই ব্যবহার করবে  দুই তৃতীয়াংশ মানুষ

দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) । বিষয়টি যখন শিরোনামে স্থান করে নিচ্ছে, তখন এর একটি কাল্পনিক শূন্যতার মধ্যে বিশেষাধিকার পাচ্ছে প্রযুক্তি। কেননা এর মাধ্যমে মানুষের পছন্দ ও গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তারপরও সূচকে মানব উন্নয়নের গতিতে ব্যবধান বাড়ছে। বিশ্বজুড়েই উন্নয়ন সূচকে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তবে এআই এই ধকল সামনে নেবে বলে আশাবাদী জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। জরিপ অনুমান বলছে আগামী এক বছরে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা কর্মক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করবে। 

সংস্থাটি মনে করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সমৃদ্ধ মানব উন্নয়নের দিকে কাজ করার জন্য আমাদের একটি পরিপূরক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে, উদ্দেশ্যমুখী উদ্ভাবনের সক্ষমতা অর্জনে বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে। মানব উন্নয়নে এআই ব্যবহার করে নাগরিকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।  

ইউএনডিপি’র জরিপ বলছে, বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানব উন্নয়ন সূচকের নিম্ন ও মধ্যম সারির দেশের মানুষ মনে করেন এআই তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। আর ৬০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এআই নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এছাড়াও ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করে, কর্মসংস্থানের দখল নিয়ে নেবে আই। এ কারণেই হয়তো জরিপে অংশনেয়া ১৩ শতাংশই চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। 

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর প্রকাশিত ২০২৫ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের হিসাবে, গত ৩৫ বছরের মধ্যে মানব উন্নয়নের গতি সবচেয়ে কম। গত চার বছর ধরেই চলছে এমন ত্রাহি দশা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর যথাযথ ব্যবহার এই স্থবিরতা কাটিয়ে উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে ৫ এপ্রিল প্রকাশিত মানব উন্নয়ণ সূচকে। 

ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুসারে, মানব উন্নয়ন সূচকে এবার ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। এর আগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছিল ১৩১তম।  ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তৈরি হয়েছে প্রতিবেদনটি। 

ইউএনডিপির এবারের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৭ বছর। গড় স্কুল শিক্ষা ৬ দশমিক ৮ বছর। ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর মানব উন্নয়ন সূচকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও দরিদ্র ৪০ ভাগ মানুষের হাতে আছে মাত্র ২০ দশমিক ৪ শতাংশ আয়। ধনী ১০ ভাগ মানুষের কাছে আছে ২৭ দশমিক ৪ ভাগ আয়। সর্বোচ্চ ধনীদের ১ শতাংশের হাতে আছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ আয়। 

এমন অবস্থায়  ইতিমধ্যেই অনেক অঞ্চলে এআই ব্যবহার শুরু হয়েছে। এক-পঞ্চমাংশ মানুষ এখন এআই ব্যবহার করছেন, যা আগামী বছরে আরও বাড়বে। এ কারণে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সহজল্যভা নিশ্চিত করাতেই প্রধান্য দিতে হবে। তবে শুধু অ্যাক্সেস নয়, মানুষ কিভাবে এআই ব্যবহার করে সেটিই হবে সত্যিকার উন্নয়নের মাপকাঠি বলে মনে করেন ইউএনডিপি রিপোর্ট অফিসের পরিচালক পেদ্রো কনসেইসাও। তিনি বলেছেন, কৃষক থেকে উদ্যোক্তা—সবার জন্য জ্ঞান ও দক্ষতার এক নতুন সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হতে পারে অনন্য। এজন্য সঠিক নীতি প্রণয়নের বিকল্প নেই। 

এদিকে বিশ্বজুড়েই ২০২০-২১ সালের বৈশ্বিক সংকটের পরে যে পুনরুদ্ধার প্রত্যাশিত ছিল, এই প্রতিবেদনে তার বদলে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। "A Matter of Choice: People and Possibilities in the Age of Artificial Intelligence" শিরোনামের রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের HDI (Human Development Index) তথ্যানুযায়ী বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে উন্নয়ন স্থবির হয়ে আছে। এ বিষয়ে ইউএনডিপি প্রশাসক আচিম স্টেইনার বলেছেন, "যদি বর্তমান স্থবিরতাই 'নতুন বাস্তবতা' হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ মানব উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে পারে।"

তিনি আরও বলেছেন, “এআই কোন জাদুর কাঠি নয়, তবে এটি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে উন্নয়নের নতুন পথ খুলে দিতে পারে।”