রিচার্জিং এ নতুন ধারার জালিয়াতি অভিযোগের ব্যাখ্যা

তৃতীয় পক্ষের অ্যাপে ৮০% বেশি দামে প‍্যাকেজ বিক্রি?

২৯ এপ্রিল, ২০২৫  
২৯ এপ্রিল, ২০২৫  
তৃতীয় পক্ষের অ্যাপে ৮০% বেশি দামে প‍্যাকেজ বিক্রি?

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) অনুমোদিত হারের তুলনায় বিকাশের মতো তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মে উচ্চ মূল্যে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত চার্জ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

‘মোবাইল প্যাকেজ ওভার চার্জিং : এ কল ফর রেগুলেটরি অডিট অ্যান্ড কনজিউমার প্রোটেকশন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে মোবাইল অপারেটর অ্যাপে তালিকাভুক্ত দাম এবং বাহ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে চার্জ করা মূল্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসংগতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব। 

তিনি তার ফেসবুকে জালিয়াতির স্ক্রিন শট দিয়েছেন। সেখান থেকে বোঝা যাচ্ছে সিমটি এয়ারটেলের। এটি বর্তমানে রবির সঙ্গে একীভূত একটি সেবা। এই সিমটির ডাটা প্যাকেজ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লিখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যাকেজগুলো অনুমোদিত মূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি হারে বিক্রি হয়েছিল। মোবাইল অপারেটরের নিজস্ব অ্যাপে ৩০ দিনের ৪৫ জিবি ডেটা প্যাকের দাম ছিল ৪৯৭ টাকা, কিন্তু একই প্যাকটি বিকাশের মাধ্যমে ৫৯৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি।

তবে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকের দাম বেশি রাখার প্রসঙ্গে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিমের ভাষ্য, বিকাশ-এর প্ল্যাটফর্মে মোবাইল রিচার্জ সংক্রান্ত সকল প্যাকেজ এবং প্যাকেজের মূল্য-সংশ্লিষ্ট টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত। পেমেন্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ কেবল এক্ষেত্রে গ্রাহকের জন্য পেমেন্ট করার সুবিধা দিয়ে থাকে।

আর যেই অপারেটরের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে এই অভিযোগ সেই প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়েটার কোম্পানি সচিব ও  চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেছেন, ডেটা প্যাকেজের মূল্য বিষয়ে প্রকাশিত পোস্ট এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে আমরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি। কারণ, প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করা হয়নি বা ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি, যা দুঃখজনক। এখানে প্রতীয়মান নিয়ন্ত্রক নীতিমালা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকার কারণে প্রতিবেদনের সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে চাই, আমাদের সব ট্যারিফ বিটিআরসি অনুমোদিত সীমার মধ্যে রয়েছে এবং মোবাইল অ্যাপ, এমএফএস ও ওয়েব পোর্টালে আলাদা বোনাস অফারও নিয়ম মেনে করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে প্রয়োজনীয় যেকোনো তদন্তে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো।

এদিকে পোস্টে যুক্ত করা নথি থেকে দেখা যায়,  ১৯৮ টাকায় তালিকাভুক্ত একটি ৭ দিনের ২৫ জিবি প্যাক বিকাশের মাধ্যমে একই দামে ২০ জিবি প্যাক হিসাবে বিক্রি হয়েছিল, যা ৮০ শতাংশ ওভারচার্জ। এছাড়াও ২২৭ টাকা মূল্যের একটি সাত দিনের ৪০ জিবি প্যাক বিকাশে একই মূল্যের জন্য ৩৫ জিবি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিত্তি মূল্যের তুলনায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি। একইভাবে ৭  দিনের ১০ জিবি এবং ৩-দিনের ৫ জিবি বিকল্পগুলোসহ অন্যান্য প্যাকেজগুলোও ৫৫ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জে বিক্রি হয়েছে।

এ নিয়ে ফয়েজ আহমেদ লেখেন, বিটিআরসিতে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের অধীনে একটি সুষ্পষ্ট প্রাইসিং রেগুলেশন রয়েছে। তার তোয়াক্কা না করে ২০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রাক্কলন অতিরিক্ত মূল্য আদায় গ্রাহকস্বার্থ ও রাষ্ট্রের সার্বিক স্বার্থবিরোধী বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের রেগুলেটরি শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

প্যাকেজের অতিরিক্ত মূল্য আদায় বিষয়ে রবি’র সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, নিয়ম মেনেই রবি আজিয়াটা প্যাকেজের পূর্বানুমোদন নিয়ে বাজারে গ্রাহক পর্যায়ে প্রদান করছে। সেখানে ডাটা এবং ডাটা সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ সম্পর্কিত নির্দেশিকা -২০২৪ অনুসারে প্যাকেজে মূল ইন্টারনেট ভলিউমের সঙ্গে বিভিন্ন চ্যানেলে ভিন্ন ভিন্ন বোনাস দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ১৯৮ টাকায় ৭ দিনে ২০ জিবি ডাটা অফার করা হয়েছে। এর মধ্যে মূলত ৩.৫জিবি মুল ডেটা প্যাক আর বাকিটা বোনাস। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ইনক্লুশান বাড়াতে বিকাশ অ্যাপে সাড়ে ১৬.৫ জিবি বোনাস দিয়ে ২০জিবির পাশাপাশি নিজেদের অ্যাপে গ্রাহক আকর্ষণ করতে আরো ৫জিবি বেশি বোনাস দিয়ে ২৫ জিবির প্যাকেজ সাজানো হয়েছে। নিজেদের অ্যাপকে প্রমোট করতেই এই প্রমোশনাল অফার। এতে জালিয়াতি তো নয় বরং গ্রাহককে অতিরিক্ত ডাটা উপহার দেয়া হয়েছে।