৯ দিন আগেই খুলছে কুয়েটের হল; ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
কুয়েট : মন্ত্রণালয়কে জানাবে ইউজিসি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে খুলে দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দুপুরে সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভূঞা সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অপরদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনা করতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মন্ত্রণালয়কে তাদের পর্যালোচনা জানিয়ে ভালো কিছুর আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধিদল।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ইউজিসি প্রতিনিধিদল কুয়েটে পৌঁছায়। তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তনজিমউদ্দীন খান, বুয়েটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব আহমেদ শিবলী।
প্রতিনিধিদলের সসদস্যরা প্রথমেই অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। তারা অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা চালান। যদিও তারা একজনমাত্র শিক্ষার্থীকে অনশন থেকে সরিয়ে আনতে সফল হন। অন্য শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যেতে দৃঢ় থাকেন।
পরবর্তী সময়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর সংঘটিত হওয়া হামলা, তাদের আন্দোলন ও দাবিগুলো তুলে ধরেন।
বৈঠকে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা পুরো চিত্র প্রতিনিধিদলের কাছে উপস্থাপন করেছেন এবং ভিসি কর্তৃক মিডিয়া ও শিক্ষকদের কাছে যেসব গুজব উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো খণ্ডন করেছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, প্রতিনিধিদল তাদের যথাযথ বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। প্রতিনিধিদল বলেছে, একটা বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতিনিধিদল তাদের জানিয়েছে তারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের সুপারিশ পেশ করবে। সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষার্থীরা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দুই মাস আগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হলেও সেটার কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা খবর পেয়েছেন স্মারকলিপির ব্যাপারে অনেকেই অবগত নন।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল হল খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ এবং ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। দুই রাত খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে ১৫ এপ্রিল ছয়টি ছাত্র হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রীরাও হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। বর্তমানে কুয়েটের সব হলেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন।
এদিকে কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্রদল‘ পরিকল্পিতভাবে মব’ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ভয়হীন ক্যাম্পাস, নিরাপদ ও স্বাভাবিক একাডেমিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সাম্প্রতিক সময়ে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রদলকে জড়ানো বা ছাত্রদলের ওপর যে কোনোভাবে দায় চাপানোর একটি অসৎ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমরা তাদের এই হীন অপচেষ্টার নিন্দা জানাই।’
তবে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। বুধবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ খুলনা কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে মঙ্গলবার বিকালে ফেসবুকে পোস্ট দেন।এদিকে কুয়েট ভিসি পদত্যাগ না করলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুঁসে উঠবে শিক্ষার্থীরা বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার (জাবি) শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল।