বাংলাদেশের মৎস্যখাতে প্রযুক্তি সহায়তায় আগ্রহী কোরিয়া

২৩ এপ্রিল, ২০২৫  
২৩ এপ্রিল, ২০২৫  
বাংলাদেশের মৎস্যখাতে প্রযুক্তি সহায়তায় আগ্রহী কোরিয়া

বাংলাদেশের মৎস্যখাতে প্রযুক্তিগত গবেষণা সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের মৎস্যবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার এবং জাতীয় মৎস্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট চোল ইয়ং সি। দেশটির বন্দরনগরী বুসানে বাংলাদেশের সফররত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সঙ্গে বৈঠকে এই আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। 

চোল ইয়ং সি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার মৎস্যখাতে বাংলাদেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় খুঁজে বের করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আলোচনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আরও সহযোগিতার বিকাশ উভয়পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই অবৈধ মাছ ধরার পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ধরার ট্র্যাকিংয়ের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে। নির্দিষ্ট প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশকে কোরিয়া সহযোগিতা করতে পারে। প্রযুক্তিগত গবেষণা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা যেতে পারে।  

কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তৌফিক ইসলাম শাতিলের উপস্থিতিতে এই বৈঠকে উপদেষ্টা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন-  বিএফডিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সুরাইয়া আখতার জাহান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটর (বিএফআরআই)  মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র।

বৈঠকে ফরিদা আখতার বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য এবং এ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, মেরিকালচার ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা গভীর সমুদ্রে অবৈধ মাছ ধরার বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদার, গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ধরায় সক্ষমতা অর্জন, সামুদ্রিক সম্পদের মজুদ নির্ণয়ে সহায়তা, সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষকদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, মূল্য সংযোজন পণ্য উন্নয়ন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।  

দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার কোরিয়ান মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলদেশ সরকার সাধারণ মানুষের আমিষ চাহিদা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানতে পেরেছেন যে, কোরিয়ান সরকার তার জনগণকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে মাছের যোগান দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপে নিয়েছে। উভয় দেশেরই কমন ও বৈশ্বিক অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রে দূষণ, আইইউই ফিসিং, অধিক মৎস্য আহরণ, অবৈধ ফিসিং গিয়ার ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

উপদেষ্টা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্র একত্রে কাজ করতে পারে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এজন্য উভয় দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সমঝোতা স্মারক সই করা যেতে পারে মর্মে উপদেষ্টা প্রস্তাব করেন।

কোরিয়ার ভাইস মিনিস্টার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, মৎস্যখাতে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভাইস মিনিস্টার আশ্বস্ত করেন, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার মৎস্যখাতে বাংলাদেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় খুঁজে বের করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আলোচনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আরও সহযোগিতার বিকাশ উভয়পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  

সফরকালে উপদেষ্টা এরই মধ্যে কোরিয়া মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (কেএমআই) সভাপতি, কোরিয়ান ফিশারিজ রিসোর্সেস এজেন্সির (এফআইআরএ) সভাপতি, পুকিয়ং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, কোরিয়া ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ অন্যান্যদের সাথেও দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বুসান ফিস প্রসেসিং এবং এক্সপোর্ট সেন্টার গংসু ফিস ভিলেজ পরিদর্শন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।