পদত্যাগ করলেন রাফেল কবির সহায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

প্রশাসনিক শুন্যতার মুখে বেসিস?

১ মে, ২০২৫  
২ মে, ২০২৫  
প্রশাসনিক শুন্যতার মুখে বেসিস?

আইএসপিএবি এবং ই-ক্যাব যখন নির্বাচনে সরব তখন অনেকটাই প্রশাসনিক শুন্যতায় পড়লো দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। দীর্ঘ ১৭ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ১ মে থেকে সংগঠনটিতে আর থাকছেন না বেসিস সচিব হাশিম আহমেদ। এক মাস আগেই চাকরি ছেড়েছেন তিনি।

অপরদিকে ৩০ এপ্রিল প্রশাসক চালিত বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন রাফেল কবির। বর্তমান প্রশাসক  তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে পদত্যাগ পত্রে দিলেও নির্বাচন ঝুলে যাওয়াকেই কারণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকরা। 

সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবিরের পদত্যাগের পর কমিটি থাকবে কি না এ বিষয়ে প্রশাসকের কাছে অনলাইনে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এমনকি ফোনেও সাড়া দেননি। তবে রাত পৌনে ১২টার দিকে বেসিস সচিবালয় থেকে ৮ ডিসেম্বর গঠিত সহায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন প্রশাসক। 

এর আগে গত ২ মাসে সহায়ক কমিটি থেকে আরো কয়েকজন সিনিয়র ইন্ডাস্ট্রি মেম্বার পদত্যাগ করেন। মামনুন কাদের পদত্যাগ করেন ফেব্রুয়ারি মাসে। এর পরের মাসে মার্চ মাসে পদত্যাগ করেন আরো ৩ জন। রাইসুল কবির, ফিদা হক ও মাহতাবুদ্দিন আহমেদ। এদের সকলেই এই কমিটির কাজের পরিবেশ না থাকা ও কিছু সংখ্যক সদস্যের অপেশাদারী ও স্বৈরাচারী ব্যবহারের কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়।

প্রসঙ্গত,  ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন বেসিস প্রশাসক মুহম্মদ মেহেদী হাসান। এরপর বেসিসে নিযুক্ত প্রশাসককে সহযোগিতা করার জন্য সংগঠনটির ১১ জন সদস্যকে নিয়ে ৮ ডিসেম্বর এই সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সহায়ক কমিটিতে রাফেল কবিরকে চেয়ারম্যান, সৈয়দ মামনুন কাদের ও মো. মিজানুর রহমানকে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৮ ডিসেম্বর সহায়ক কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের পর ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী  ৪ এপ্রিল কার্যত এই কমিটির দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা। 

অবশ্য গত ১৬ এপ্রিল সংগঠনটির ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বেসিসের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সুফিয়া আক্তারকে। অন্য দুই সদস্য হলেন উপসচিব সন্দ্বীপ কুমার সরকার ও সহকারী বাণিজ্য পরামর্শক (উপনিয়ন্ত্রক) সিরাজুল ইসলাম। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে যুগ্ম সচিব শায়লা ইয়াসমিনকে। অন্য দুই সদস্য হলেন উপসচিব মাজেদুল ইসলাম ও রেজাউল করিম।

এর আগে বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহর সই করা আদেশে প্রশাসক বসানোর কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি নিবন্ধিত বাণিজ্য সংগঠন। গত ১৭ অক্টোবর বেসিসের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এবং ১৯ অক্টোবর সহসভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন মর্মে জানা গেলেও তাঁদের পদত্যাগপত্র মহাপরিচালক, বাণিজ্য সংগঠনের কাছে পাঠানো হয়নি। এরপর বেসিসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলেও পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের গঠনপ্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আইসিটি উদ্যোক্তা কাউন্সিল ও বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ এবং সাধারণ সদস্যদের প্রতিনিধিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ নভেম্বর শুনানি করা হলেও পূর্বের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উপস্থিত হননি এবং পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের চলমান অস্থিরতা ও অসন্তোষের কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এ পরিস্থিতিতে বেসিসের পরিচালনা পর্ষদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আর তাই বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২–এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।