ডাক ও টেলিযোগাযোগের অধীন রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে অবস্থিত টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) কে হাইটেক পার্ক হিসেবে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে শুরুতে টেশিসকে একটা ফাংশনিং মিড-টেক বা লো-টেক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়া করানোর চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
ঈদের ঠিক আগে আগে টেশিস এই এই রূপান্তরের অনুমোদন দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ। ১ এপ্রিল নিজের ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন আইসিটি ও টেলিকম খাতের জন্য মনোনীত এই উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, টেলিকম সচিব ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান এবং আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এই রুপান্তরে তাকে সাহায্য করছেন।
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন টেলিকম খাতের বাইরের ব্যক্তিরাও। এদের মধ্যে উদ্যোগটিকে প্রসংশনীয় বলে মন্তব্য করেছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার। এছাড়াও মুঠোফোন গ্রাকহ এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, টেশিস কে উৎপাদনমুখী ও লাভজনক করা সম্ভব। দীর্ঘদিন যাবত আমাদের এ নিয়ে দাবি ছিল কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। অবশেষে আপনি উন্নয়নে হাত দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ। আশা রাখি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে উপদেষ্টা বদ্ধপরিকর হবেন।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আলোচিত সাবেক সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেছেন, এসময় টেশিস এর ফোন ছিল অনেক টেকসই। একটা কিনলে বছরের পর বছর যেত, নষ্ট হত না। দামও ছিল অনেক কম। আর এখন চাইনিজ প্যানাসনিক হোক, আর যাই হোক, তিনমাস থেকে ছয়মাসের ভিতর নষ্ট, সার্কিট শেষ। টেশিসকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারলে, সেটা হবে বিরাট এক কাজ।
বুয়েট শিক্ষার্থী মোঃ আমানাত মনে করেন, এখন ছোট ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ক্যাবল, রেগুলেটরের পাশাপাশি মেকানিক্যাল সলিনয়েড ভালব, রিলিফ ভালব, সার্ভো ভালব গুলাও কিভাবে দেশে বানানো যায় সেই দিকে পরিকল্পনা হাতে নেয়া যায়। আরেকটা টার্গেট রাখা যায়। ৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় এমন সব প্রডাক্ট বাংলাদেশে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের ইউজ করে কিভাবে উৎপাদন করা যায় সেইটারও চিন্তাভাবনা রাখা জরুরি।
ব্লগার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়ার বিকল্প নেই। কোন বিষয়ে টেকনোলজি ক্রয় করতে হলে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের বহুজন প্রবাসে নানা বিষয়ে জ্ঞান রাখেন; দেশে যথাযথ ব্যক্তি না পেলে বিদেশী পরামর্শক না এনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কিভাবে যুক্ত করা যায় তা খতিয়ে দেখা জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে ১ জনকে নিয়ে এসে কোন পদে বসিয়ে দেয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাই প্রথমে প্রয়োজনীয় পরামর্শক নিয়োগের জন্য আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগ দেয়া উচিত। রাজনৈতিক আদর্শ থাকবে; কিন্তু নিয়োগের সময়ে যাচাই বাছাই ছাড়া নিয়োগ বন্ধ কর উচিত।
নেটিজেন নাজমুল হুদার প্রত্যাশা- আশা করি টেশিস আমাদের রাগেড ফোনের চাহিদা কমদামে মেটাবে। কারণ আমাদের কৃষকদের প্রচুর রাগেড ফোনের চাহিদা আছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে আমাদের কৃষকদের ফোন গুলোর দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
টেশিসকে হাইটেক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের বিষয়ে উপদেষ্টা ফয়েজ অভিযোগ করেছেন, ১৯৬৩ সালে জার্মানির সিমেন্স এর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত সফল প্রতিষ্ঠান টিশিসকে মেরে ফেলা হয়েছে। মাঝখানে দোয়েল ল্যাপটপের হাইপ উঠানো হয়েছে। ভিতরে ভিতরে দোয়েল উৎপাদন হয়েছে মালোয়েশিয়াতে, এখানে এসেম্বলিং হয়েছে মাত্র। শত শত দোয়েল ল্যাপটপ অবিক্রীত। ল্যান্ডফোন
সেট বানাতো কোম্পানিটি, সেটা বাটন বা ফিচার ফোন বানানোর সক্ষমতায় পৌছানো যায়নি। গাজীপুরের আহসানুল্লাহ মাস্টারের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য রাসেল শিল্পের জমি দখল করে আবাসিক এলাকা নয় এরকম শিল্পাঞ্চলে স্টেডিয়াম বানিয়েছে, স্রেফ লুটপাট করতে। অক্ষম প্রতিষ্ঠান টেশিস তার সম্পদ রক্ষাতেও ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে ওয়াইফাই রাউটার, বুস্টার, চার্জার ইত্যাদি মোবাইল টেলিফোনের সব ধরনের এক্সেসরিজ এখনো আমদানি করা হয়। এটা ইমাজিন করতে কষ্ট হয় যে দেশের প্রায় শতভাগ ইউএসবি কেবল, পাওয়ার কেবল, এডাপ্টার ইত্যাদি আমদানি করা লাগে। সাধারণ পিএবিএক্স বিদেশ থেকে আসে। কর্মসংস্থান কিভাবে হবে! বিশেষ এই লো টেক প্রোডাক্টগুলোর জন্য সংস্থাটিকে কিভাবে ঢেলে সাজানো যায় তার জন্য এর মহাপরিচালক এর সাথে আলাপ হয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা চাইনিজ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যানগুলোকে বাংলাদেশে আনতে উৎসাহিত করেছেন। এখানে টেলিফোন শিল্প সংস্থার বিদ্যমান ইনফাস্ট্রাকচারাল ক্যাপাসিটিকে কিভাবে ইন্টিগ্রেট করা যায় তার চিন্তা করছি!
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক মাসুদ রূমীর দাবি, অনেক আগে থেকেই ওয়ালটন, ফেয়ার ইলেকট্রনিক, যমুনাসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান হাই-টেক পার্কের সুবিধা পাচ্ছে। অথচ রাষ্টায়ত্ব একমাত্র ডিজিটাল ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেসিসকে কেন হাই-টেক পার্কের বাইরে রাখা হয়েছিল তার তদন্ত হওয়া দরকার। যেসব কর্মকর্তার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে টেসিসকে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা উচিত। শুধু টেসিস নয়, একইভাবে রুগ্ন করে রাখা হয়েছে টেলিটককেও। আশাকরি আপনার দূরদর্শিতায় টেলিটক আবার জেগে উঠবে। এই টেলিটকের সিম কেনার জন্য মানুষ লাইন ধরেছিল। এমন অফার দেন যাতে আবার লাইন ধরে সিম কেনে।