অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিটিআরসি ও টিকটক এর যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল সেফটি সামিট অনুষ্ঠিত

ডিজিটাল স্পেসে স্বাধীনতা ও কর্তব্যে মেলবন্ধনের আহ্বান

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  
ডিজিটাল স্পেসে স্বাধীনতা ও কর্তব্যে মেলবন্ধনের আহ্বান

দেশের প্রথম বারের মতো ডিজিটাল সুরক্ষা সম্মেলন করলো বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। সরকারি-বেসসরকার সংস্থামূহের প্রতিনিধি, আইনশৃংখলা বাহিনী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ  এবং ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী লা মেরিডিয়ান হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী এই সম্মেলনে। সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, অনলাইন নিরাপত্তা, ডিজিটাল সাক্ষরতা, ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং ডিজিটাল আচরণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।  এসময় প্রোপাগ্যান্ডর ফ্যাক্টচেক করা, ভুক্তভোগীদের স্ক্রিন শট নেয়ার পাশাপাশি লিংক সংরক্ষণ এবং হেইট স্পিচ বন্ধে কন্টেন্ট ক্রিয়েটিংয়ে দায়িত্বশীল হওয়ার নানা কৌশল তুলে ধরেন বক্তারা। অধিকার ও স্বাধীনতার মধ্যে সমন্বয়ে পলিসি ও অনুশীলনের ওপর জোরদার করা হয়। দুর্যোগকালীন সময়ে কীভাবে গ্লোবাল ইন্টারনেট ছাড়াও দেশ ডিজিটালি সচল থাকে সেই পথ বিনির্মানেও পরামর্শ উঠে আসে সেমিনারে। 

স্ট্রাটেজম প্রিন্সিপাল আবু নাজাম মোহাম্মাদ তানভির হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বাংলাদেশে পুলিশের সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন এর পুলিশ সুপার খালেদা বেগম, ডিজিটালি রাইট ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ চৌধুরী, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মাহিম আহমেদ। 

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক এর সঙ্গে যৌথ আয়োজনে সকালে ডিজিটাল সেফটি সামিট বাংলাদেশ-২০২৫ উদ্বোধন করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী। উদ্বোধনী বক্তব্যে দেশের ডিজিটাল স্পেসকে নিয়ন্ত্রণ নয়; এর পরিবেশ উন্নয়নে বিটিআরসি কাজ করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি কেবল বিনোদন বা নেটওয়ার্কিংয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম নয় এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিটিআরসি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে একটি সহায়ক নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরি, দায়িত্বশীল উদ্ভাবন, ব্যবহারকারী সুরক্ষা এবং স্বচ্ছ রেগুলেশনে উৎসাহিত করে।  তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা বৃদ্ধির অর্থ প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা বা দমন করা নয়। বরং, আমাদের লক্ষ্য হল এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন বিকশিত হতে পারে, এবং ব্যবহারকারীরা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু এবং প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে সুরক্ষিত থাকে। 

বিটিআরসি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো সম্প্রসারণ, সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষ যাতে ডিজিটাল পরিষেবা নিশ্চিতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সহায়ক নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরি, দায়িত্বশীল উদ্ভাবন, ব্যবহারকারীর সুরক্ষা এবং স্বচ্ছ রেগুলেশনকে উৎসাহিত করে।  তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা বৃদ্ধির অর্থ প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা বা দমন করা নয়। বরং, আমাদের লক্ষ্য হল এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন বিকশিত হতে পারে এবং ব্যবহারকারীরা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু ও প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে সুরক্ষিত থাকে। 

স্বাগত বক্তব্যে টিকটক এর আউটরিচ অ্যান্ড পার্টনারশিপ সিদরা জলিল ম্যানেজার জানান, নীতিমালা না মানায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে আপলোড করা ১ কোটি ১৬ লাখ ভিডিও সরিয়েছে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক। প্লাটফর্মটি জানায়,  ৯৯.৬ শতাংশ ভিডিও সরানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আর ৯৬.৭ শতাংশ ভিডিও ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরিয়েছে। এসময় টিকটক ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে বলে জানান টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক হেড অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশন্স ফেরদৌস আল মোত্তাকিন।

প্যানেল আলোচনা শেষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির সিস্টমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল উর রহমান বলেন, বিটিআরসি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলির সাথে নিয়মিত আলোচনায় যুক্ত থাকে যাতে তারা বাংলাদেশের ডেটা সুরক্ষা বিধি মেনে চলে। আমাদের মূল লক্ষ্য এমন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যেখানে ব্যবহারকারীর ডেটা দায়িত্বের সাথে পরিচালিত হয় এবং এটি সংগ্রহ , সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণে ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। 

সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাল্টি-স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচ প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধরনের হুমকি মোকাবেলায় বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ইন্টারেন সার্ভিস প্রোভাইডারস এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের সাথে বহুমপক্ষীয় অংশগ্রহণের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই দায়িত্বশীল  ডিজিটাল আচরণ তৈরিতে বিটিআরসি দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।