অনলাইনের ডাকে ঢাকায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতিতে জনতার ঢল

১২ এপ্রিল, ২০২৫  
১২ এপ্রিল, ২০২৫  
অনলাইনের ডাকে ঢাকায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতিতে জনতার ঢল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে অনলাইন প্লাটফর্ম ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট’ এর ডাকে ‘মার্চ ফর গাজা’র পক্ষে সংহতি জানিয়ে সকালেই লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিতব্য ফেসবুক পেজ ‘মার্চ ফর গাজা’ ইভেন্ট পেজে লাইভ শুরু না হলেও এই দৃশ্যগুলো এরই মধ্যে নিজেদের ফেসবুক, ইউটিউব পেজে সম্প্রচার করছে অনলাইন, টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোও। পিছিয়ে নেই ইউটিউবার থেকে শুরু করে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরাও। 

লাইভগুলোতে দেখা যাচ্ছে, আগত লোকজনের হাতে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা এবং বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। কারও হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, কারও বা মাথায় বাঁধা প্রতিবাদী ব্যানার—সবাই একসঙ্গে চলেছেন গন্তব্যের দিকে। গাজায় চলমান বর্বরোচিত ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী এই গণজমায়েত। তাক্ববির-শ্লোগানে মুখর হয়েছে প্রতিটি সড়ক।

সকাল ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায় মুসল্লীসহ সাধারণ মানুষকে। এক হাতে পতাকা, অন্য হাতে প্রতিবাদের চেতনায় ভরা প্ল্যাকার্ড—প্রতিটি মুখেই ক্ষোভ আর দৃঢ়তা। এই যাত্রায় অংশ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুরাও। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। 

সবার নিরাপত্তায় সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে পুলিশ-র‌্যাব. বিডিআর, সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা তৎপরতা।  

জানাগেছে,  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনের মঞ্চ থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। এরপর ইসরায়েলি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে বর্জন করা নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করা হবে। পরে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আয়োজনটি শেষ হবে।

প্রসঙ্গত, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে খোলা ইভেন্ট পেজে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭৩ হাজার মানুষ তাতে ‘আগ্রহ’ দেখিয়েছিলেন এবং ৬ হাজার ৩০০ জন অংশ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে সকালেই এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দ্বিগুণের বেশি। 

আয়োজকদের সূত্রে প্রকাশ, ফিলিস্তিনের পক্ষে ঢাকায় এটিই হবে সবচেয়ে বড় জমায়েত। তারা দল–মতনির্বিশেষে সবাইকে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক এই জমায়েতে সভাপতিত্ব করবেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।

ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা অতিথিদের চলাচল ও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ওই পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের গণমাধ্যম সমন্বয়ক শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেছেন, শনিবার (কাল) বেলা দুইটায় পাঁচটি পয়েন্ট থেকে মার্চ শুরু করে বেলা তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত হবে। বাংলামোটর, কাকরাইল মোড়, জিরো পয়েন্ট, বকশিবাজার মোড় ও নীলক্ষেত মোড় থেকে মিছিল উদ্যানে ঢুকবে।

আজ তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বিশেষ নির্দেশনা ও চারটি সাধারণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ নির্দেশনা দুটি হলো—শনিবার টিএসসির মেট্রোস্টেশন বন্ধ থাকবে ও সব পরীক্ষার্থীর জন্য রাস্তা বিশেষভাবে উন্মুক্ত থাকবে। আর সাধারণ নির্দেশনাগুলো হলো—গণজমায়েতে অংশগ্রহণকারীরা নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সামগ্রী (পানি, ছাতা, মাস্ক) সঙ্গে রাখবেন ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন; যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য–শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী–স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন; রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড, শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করার অনুরোধ এবং দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে সক্রিয় থাকতে হবে, প্রতিরোধ গঠনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে।