কড়াইল বস্তির আগুন নিভলেও ‘হাইটেক পার্ক’ ইস্যুতে জ্বলছে সোশ্যাল মিডিয়া

কড়াইল বস্তির আগুন নিভলেও ‘হাইটেক পার্ক’ ইস্যুতে জ্বলছে সোশ্যাল মিডিয়া
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১৫:৪৫  

গুলশান ও বনানীর মাঝামাঝি ৯০ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি- কড়াইল বস্তি। ২৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার রাতে আগুনে পুড়েছে এই বস্তির দেড় হাজারের মতো ঘর-বাড়ি। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ১৯টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয় দমকল বাহিনী। 

রাতে আগুন নিভলেও এই ঘটনায় ‘আগুন’ লাগে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। সেই আগুন ছড়িয়ে দুপুর নাগাদ ‘ভাইরাল’ হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় ফেসবুক’র অ্যালগরিদমে এই আগুনে ‘ঘি’ ঢালেন ব্যবহারকারীরা। মূলতঃ ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে আইসিটি খাতের সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে অনুষ্ঠিত বৈঠকের একটি বক্তব্য থেকে। 

ঠিক এক বছর আগের এই মাসেই গুলশান সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের বক্তব্যকে ঘিরে। গত বছরেরর ৯ নভেম্বরের বক্তব্যকে চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর রাত ৯টা ১৪ মিনিটে প্রথম এই বিস্ফোরক হিসেবে উপস্থাপন করেন জুলাই অভ্যূত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতার দায়ে বিচারচলাকালীন কার্যক্রম নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। ‘হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা, বেঁচে থাকার অবলম্বন নিঃশেষ করে দিতে হবে?’ - প্রশ্ন রেখে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে ছড়িয়ে দেন বিষবাষ্প। সেই বাষ্পে বুঁদ হয়ে রাত ১০টা ৩১ মিনিটে একে একে দুই মেলাতে গিয়ে কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ে ‘কবি নবারুন ভট্টাচার্যের  কবিতা-ইতরের দেশ’ এর মত মনে হচ্ছে- স্ট্যাটাস দেন ডিজিটাল ক্রিয়েটর আরিফুজ্জামান তুহিন।রাত ১১টা ৫১ মিনিটে একটি অনলাইন পোর্টালের শিরোনাম হাইলেট করে ‘কড়াইল বস্তিতে আগু ন লাগার আসল কারণ’ শিরোনামের পোস্ট করে নতুন করে এই স্ফূলিঙ্গ উস্কে দেয়া হয় আল আমিন রহমান নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।  

সেই আগুন নেভাতে ২৬ নভেম্বর, বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে একটি পোস্ট করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। পোস্টে তিনি সাফ জানিয়ে দেন ‘বর্তমানে কড়াইল বস্তির জায়গায় যে-কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।’

এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডার শিকার সৈয়দ আলমাস কবির বলেছেন, ‘কড়াইলে গতকালের বিভীষিকাময় অগ্নিকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বছর পূর্বের আমার একটি বক্তব্যকে প্রসঙ্গের বাইরে নিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি তৈরির প্রচেষ্টা করা হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, কড়াইলের প্রায় ৮০ হাজার বাসিন্দার জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমার বক্তব্যের মূল লক্ষ্য ছিল। আমার অবস্থান কখনোই এলাকাবাসীর উচ্ছেদ বা স্থানচ্যুতির পক্ষে ছিল না।
কড়াইলে একটি হাই-টেক পার্কের সরকারী পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে আমি কথা বলেছিলাম, তবে আমি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলাম যে, এধরণের যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই সেখানে বসবাসকারী সবাইকে আগে পুনর্বাসন করতে হবে। এতে তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের পরিবেশও নিশ্চিত হবে।’

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের বক্তব্যও একই। তিনি বলেছেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে এই বিশাল প্লটের বনানী কর্নারের যে অংশে কোনো স্লাম নাই, তার ছোট অংশে একটি সফ্‌টওয়্যার পার্ক ভবন নির্মাণের একটি কথা উঠেছিল। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীর সাথে আলাপ করি। ওনাদের পরামর্শ মতে কড়াইল বস্তিতে যে-কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে আইসিটি বিভাগ বিরত থাকে।  

আমরা সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই, বর্তমানে কড়াইল বস্তিতে যে-কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।  বরং আমরা গণপূর্ত এবং রাজউককে আলাদা আলাদা ভাবে চিঠি পাঠিয়েছি যাতে সফ্‌টওয়্যার পার্ক নির্মাণের জন্য ঢাকার আগারগাঁও, পূর্বাচল কিংবা অন্যান্য এলাকায় জমি প্রদান করা হয়। এ জন্য সবুজ পাতা একটি প্রকল্প উঠানো হচ্ছে। গণপূর্ত তাতে সায় দিয়েছে। অর্থাৎ কড়াইল বস্তিতে অবকাঠামো তৈরির কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই, চলমান কোন প্রকল্পও নাই, এমনকি সবুজ পাতায়ও কোন প্রস্তাবনা নাই।’ 

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে ৯০ একর জমির মধ্যে ৪৭ একর বরাদ্দ করা হয় মিনিস্ট্রি অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির নামে। পরবর্তী সময়ে সেখানে আইটি ভিলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেই পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী ২০১২ সালে সেখানে জরিপও চালানো হয়। তবে সে পরিকল্পনায় বস্তি উচ্ছেদ নয়; ‘কড়াইলের মানুষের স্বপ্ন, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ অন্য সবার মতোই গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচনায় নিয়েই সেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাগিদ দিয়েছেন গুলশান সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির। 
ডিবিটেক/মুইম/ওআর