সবকিছুতেই আলো আর আশার ছায়া

মুহাম্মদ মুস্তফা হুসাইন

১২ এপ্রিল, ২০২৫  
১২ এপ্রিল, ২০২৫  
সবকিছুতেই আলো আর আশার ছায়া
বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত  বিনিয়োগ সম্মেলন দেখে বেশির ভাগেরই মনটা ভরে গেছে।  উদ্যমী তরুণেরা, আন্তর্জাতিক অতিথিরা, ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি—সবকিছুতেই একটা আলো আর আশার ছায়া। এমন আয়োজন দেশের দরজায় নতুন সম্ভাবনার শব্দ তোলে।
এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে আমার এক ছাত্রীর কথা—আসরার দামদাম। ২০১৮ সনের সামার এ আমি ওকে সৌদি আরবের Misk ফাউন্ডেশনের একটি বুটক্যাম্প এ যেতে বলি। সিলিকন ভ্যালি তে। সেখানে সে তার আইডিয়ার জন্য প্রথম পুরস্কার পায়। LED আলো দিয়ে সবজি-ফলকে দীর্ঘদিন টাটকা রাখা যাবে। wideband gap সেমিকন্ডাক্টর class এর শুরুতে এই জিনিস শুনে সে এটাকে এপলাই করতে চায় ।
একটি নির্ভেজাল স্বপ্ন নিয়ে সে বেরিয়ে পড়েছিল। গোটা ১৫ পুরস্কার পেল: MIT TR35, L’Oréal, Forbes, Fast Company, ইত্যাদি ।
Davos এর world economy forum থেকে শুরু করে নানা সম্মেলনে ডাক পেল, আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে উঠে এলো তার নাম। যেখানে প্রফেসর ইউনুস, সেও ঐখানে। এমনকি কিছু দিন আগে বাকুর সম্মেলনেও সে।
কিন্তু ৬ বছর পর—স্টার্টআপটি মোড থেকে সে বের হতে পারে নি। কোনও প্রোডাক্ট ও হয় নি ।
কিছু দিন আগে জিজ্ঞেস করে জানলাম যা আমি তখন ভেবেছিলাম—আইডিয়া টা বড্ড সোজা ছিল, হয়তো বাজার আর বাস্তবতা ঠিকঠাক মিলছিল না।
তবু আমি আসরারের সাহসকে সম্মান করি। কারণ সে শুরু করেছিল। তিন সপ্তাহে আগে একটা রেকমেন্ডেশন লেটার লিখলাম MBA করবে যদিও পিএইচডি আছে। ২০১৮ তে আমার সাথে MS করলে ও একটা পেপার লিখে Applied Physics Letter এ। যেটা Editor’s Choice হয় ।
বাংলাদেশের তারুণ্যের বুকের সাহস আর উদ্দীপনা আশা জাগানিয়া হলেও আমাদের পুরো বিশ্ব থেকে কিছু জিনিস শেখার আছে। কারণ আমাদের স্বপ্ন বিশ্ব জয়ের।
সৌদি আরব Misk, GITEX, LEAP-এ হাজারো কোটি ডলার ব্যয় করেছে, কিন্তু আজও একটা বিশ্বমানের টেক ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেনি।
ভারত Startup India চালু করে অসংখ্য স্টার্টআপ নিবন্ধন করেছে, কিন্তু গভীর উদ্ভাবনের ঘাটতি এখনো প্রবল। এদের NRI নেটওয়ার্ক কিন্তু অনেক শক্তিশালী।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক—সবাই বিনিয়োগ করেছে, ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়েছে, কিন্তু প্রকৃত গ্লোবাল ইম্প্যাক্ট খুব সীমিত।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান অন্যরকম পথ ধরেছে:
দক্ষিণ কোরিয়ার Samsung, LG, SK hynix বিশ্বকে দেখিয়ে দিছে ধৈর্য, গবেষণা আর জাতীয় ঐক্য দিয়ে কীভাবে উদ্ভাবন গড়ে তোলা যায়।
তাইওয়ানের TSMC আজ শুধু একটি কোম্পানি নয়—একটি কৌশলগত শক্তি, যা এসেছে নীরব, দৃঢ়, এবং গভীর প্রস্তুতি থেকে।
তাহলে বাংলাদেশ কী করবে?
তাই তারুণ্যকে বলি,
১। তোমার ধারণা সুন্দর—তবে একটু গভীরভাবে ভাবো আইডিয়া টি মৌলিক কিনা ।
২। hype-এর মাঝে কিছু মৌলিকতা, কিছু নীরব অধ্যবসায় যুক্ত করো ।
৩। Showcase করো, অবশ্যই—but build to last.
চোর জয়ের স্টার্টআপের হিড়িক নয়, আমাদের চিন্তার, উদ্ভাবনের, আর পরিবর্তনের দেশ হতে হবে । আইডিয়া গুলি শুনেই দুনিয়ার মানুষ বলবে, “বাহ আগেতো কখনও এভাবে ভাবিনি!” বিশ্ব জয়ের মতো আইডিয়া হলে, বিশ্ব আমাদের উপর নির্ভর করবে, তখন অনেককে কান ধরে উঠা বসা করানো যাবে।
এলন মাস্ক, জাকারবার্গ, বেজোস, ল্যারি paige, জাওয়াদ করিম, সাল খান, স্ট্যানফোর্ড হার্ভার্ড প্রিন্সটন mit থেকে পড়ছে - ডিগ্রী নিক আর না নিক, অতটুকু পর্যন্ত গেছে, ওই উদ্ভাবনের ইকোসিস্টেম এ হাতে খড়ি । এটি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ।
আমার আরেক ছাত্র ফাহাদ চট্টগ্রামের ছেলে বার্কলে থেকে পোস্টডক করে নিজের স্টার্টআপ কে ঠেলে নিচ্ছে। নাসা’র টাকায় শুরু, তারপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ধীরে ধীরে টাকা তুলে এগুচ্ছে। গ্যাস সেন্সর বানায় যেটা ইলেকট্রিক ভেহিকল এর ব্যাটারী এর নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজন। সলিড আইডিয়া । কিন্তু এর জন্য পড়ালেখা তা পোক্ত করতে হইছে। কপি অথবা সার্ভিস গ্লোবাল মার্কেট এ টেকা কষ্টকর । তাই আবারও STEM or extinction. Substance over apperance.
বুয়েটের ছেলে ইমতিয়াজ হুমায়ুন, ছোটবেলা থেকেই মানুষের মস্তিষ্ক আর চিন্তার জগৎ নিয়ে ছিল অদম্য কৌতূহল। সেই কৌতূহলই তাঁকে নিয়ে গেল রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্সে গবেষণা করতে গিয়ে ইমতিয়াজ ফাটিয়ে ফেলছে, বদলে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) জগৎ — এর নাম “grokking”।
“Grokking” মানে শুধু শিখে ফেলা না, বরং গভীরভাবে উপলব্ধি করে ফেলা — যেন এক অন্তর্দৃষ্টির মতো। ইমতিয়াজ দেখিয়েছে, কীভাবে ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্কগুলো প্রাথমিক শেখার পরেও অপ্রত্যাশিতভাবে নতুন নতুন জিনিস বুঝে ফেলতে পারে — এক বিস্ময়কর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। এই আবিষ্কার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরো দক্ষ, শক্তিশালী এবং মানব-মস্তিষ্কের মতো করে গড়ে তুলতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, পারডু বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
দ্রষ্টব্য: অভিমত-এ প্রকাশিত পুরো মতামত লেখকের নিজের। এর সঙ্গে ডিজিটাল বাংলা মিডিয়া কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বহুমতের প্রতিফলন গণমাধ্যমের অন্যতম সূচক হিসেবে নীতিগত কোনো সম্পাদনা ছাড়াই এই লেখা প্রকাশ করা হয়। এতে কেউ সংক্ষুব্ধ বা উত্তেজিত হলে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।