টিকটকের ‘স্কিন কেয়ার ভিডিও’ ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে : পেডিয়াট্রিক্স

১৩ জুন, ২০২৫ ২১:১৭  
১৩ জুন, ২০২৫ ২৩:৪৪  
টিকটকের ‘স্কিন কেয়ার ভিডিও’ ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে : পেডিয়াট্রিক্স

টিকটকে স্ক্রল করতে করতে খুব সহজেই এমন ভিডিও দেখা যায়, যেখানে টিনএজাররা তাদের দৈনন্দিন ত্বকের যত্নের কার্যক্রম দেখাচ্ছে। এ ধরনের ভিডিও বেশিরভাগ সময় শুরু হয় ‘আমার সঙ্গে প্রস্তুত হও’ এমন আনন্দময় কথাটির মাধ্যমে। তবে টিকটকে ত্বকের যত্ন নিয়ে করা এসব ট্রেন্ডিং ভিডিও টিনএজারদের ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে বলে উঠে এসেছে  বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘পেডিয়াট্রিক্স’ এর গবেষণায়। গবেষণায় ত্বকের যত্নের কার্যক্রমওয়ালা বিভিন্ন ভিডিও নিয়ে গুরুতর সতর্কতা দেয়া হয়েছে জার্নালটির গবেষণা প্রতিবেদনে

গবেষণায় উঠে এসেছে, টিকটকে সবচেয়ে বেশি রিচ পাওয়া ত্বকের যত্নের ভিডিওগুলোতে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো ত্বকে জ্বালা, লালচে ভাব বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। আর সেটি যদি হয় ‘অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’ হয়, তবে তা আজীবন ত্বকে থেকে যাবে। এমন অ্যালার্জির কারণে অনেক সাধারণ সাবান, শ্যাম্পু বা মেকআপ পণ্যও ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে তাদের জন্য। 

গবেষকরা বলছেন,  একজন টিনএজার মাসে গড়ে প্রায় একশ ৬৮ ডলার মূল্যের পণ্য ব্যবহার করে এবং কিছু ক্ষেত্রে এই খরচ পাঁচশ ডলারেরও বেশি। এ ধরনের জনপ্রিয় ট্রেন্ডিং ভিডিও উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করতে পারে, বিশেষ করে টিনএজার মেয়েদের বেলায়। এসব ভিডিওতে অসংখ্য পণ্য ব্যবহারের পরও দিনের বেলার যত্নে কেবল এক-চতুর্থাংশেই সানস্ক্রিনের ব্যবহার রয়েছে। তা-ও আবার সব বয়সী মানুষের জন্য, বিশেষ করে শিশু ও টিনএজারদের বেলায়ও। ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিনকে সবচেয়ে জরুরি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গবেষণা দলের প্রধান লেখক ও ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফাইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন’-এর ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. মলি হেইলস বলেছেন, এ সমস্যার বড় কারণ হল অনেক পণ্যের মধ্যে একই ধরনের উপাদান থাকে। টিনএজাররা সচেতন না হয়ে একই উপাদানওয়ালা একাধিক পণ্য একসঙ্গে ব্যবহার করেন, যা ত্বকের জ্বালা বা সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। যেমন– ‘হাইড্রক্সি অ্যাসিড’ রয়েছে এমন একাধিক পণ্য একসঙ্গে ব্যবহার করলে ত্বকে চাপ পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের যাচাই করা নতুন এ গবেষণায় প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে, টিকটকে শেয়ার করা ত্বকের যত্নের কার্যক্রমওয়ালা বিভিন্ন ভিডিও সাত থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে। গবেষণাটি করেছেন ‘নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন’-এর বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা বলছেন, এসব কার্যক্রমের ভিডিওতে সাধারণত ত্বকের যত্নের জন্য গড়ে ছয়টি ভিন্ন পণ্য থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি ভিডিওতে একসঙ্গে ১২টিরও বেশি পণ্য দেখান নির্মাতারা। 

এসব পণ্যের বেশিরভাগই বাজারজাত হয় টিনএজারদের টার্গেট করে এবং এর মধ্যে এমন উপাদান থাকে, যা ত্বকে জ্বালাপোড়া তৈরি করতে বা ত্বকে স্থায়ী অ্যালার্জির কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।


গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি টিকটক ভিডিওতে কেবল ছয় মিনিটে দশটি আলাদা পণ্য ব্যবহার করেছে একজন টিনএজার। ভিডিও চলার সঙ্গে সঙ্গে তার ত্বকে অস্বস্তির লক্ষণ ও স্পষ্ট ত্বকের প্রতিক্রিয়াও দেখা গিয়েছে লাইভ ক্যামেরার সামনেই।

আরেকটি বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, কিছু ভিডিওতে খুব সূক্ষ্মভাবে উজ্জ্বল ত্বকের বেশি প্রশংসা করেছেন তারা।

এ গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক ড. টারা লাগু বলেছেন, অনেক ভিডিওতে এমন সংকেত ও ছবির ব্যবহার হয়েছে, যেখানে ত্বকের রংকে উজ্জ্বল করার দিকে উৎসাহিত করেছে। এ ধরনের বার্তা, যা সৌন্দর্যবোধ ও গ্রাহক সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং এগুলো টিনএজার দর্শকদের নিজেদের সম্পর্কে ধারণা ও মনোভাবের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, ত্বকের যত্নের এসব কার্যক্রমের ভিডিও শিশু ও টিনএজারদের জন্য আসলে খুব বেশি উপকারী নয়। সৌন্দর্যের ট্রেন্ড অনুসরণের চাপ অনেক টিনএজারকে ‘পারফেক্ট’ ত্বক পেতে অস্বাস্থ্যকর ভাবে বেশি মনোযোগ দিতে বাধ্য করে, যা তাদের ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ড. হেইলস সতর্ক করে বলেছেন, যেটিকে ‘সেলফ-কেয়ার’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে সেটি আসলে সাদা ত্বক, পাতলা দেহ ও নিখুঁততার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ক্ষতিকর সৌন্দর্যের মানদণ্ডকেই প্রচার করছে।

গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৩ বছরের কিশোরী হিসেবে টিকটকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ও প্ল্যাটফর্মের ‘ফর ইউ’ পেইজ থেকে ১০০টি ত্বকের যত্নের ভিডিও সংগ্রহ করেছেন ড. হেইলস ও আরেকজন গবেষক।

এসব ভিডিওর নির্মাতাদের বয়স-লিঙ্গ’সহ অন্যান্য তথ্য, তাদের ব্যবহৃত পণ্যসমূহ, খরচ ও বিভিন্ন উপাদান নথিভুক্ত করেছেন তারা। এরপর এসব উপাদানকে এমন অ্যালার্জেনের সঙ্গে যাচাই করেছে গবেষণা দলটি, যেগুলো ত্বকের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে।

গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, টিনএজাররা কীভাবে দ্রুতই অনলাইনে ক্ষতিকর ত্বকের যত্নের অভ্যাসের সম্মুখীন হতে পারে। আর অধিকাংশ সময়ই মা-বাবা বা ডাক্তাররা জানেন না তারা ঠিক কী দেখছে। এসব ভিডিও দেখতে মজার মনে হলেও এগুলো কেবল ত্বকের ক্ষতিই করবে না, বরং টিনএজারদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও নিজেদের সম্পর্কে তাদের ধারণার ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।