৫জি, ভোল্টি সহ সব প্রযুক্তি উন্মুক্ত করার পথে সরকার
বিটিসিএল'র এমভিএনও অনুমোদন
নতুন টেলিকম নীতিমালার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমভিএনও)। টোল প্লাজা মুক্ত টেলিকম হাইওয়ে গড়তে একইসঙ্গে সিমলেস ডেটা-ভয়েস ও বিভিন্ন ওটিটি বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সেবা দিতে মোবাইল ভার্চ্যুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটরের (এমভিএনও) অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
৩০ নভেম্বর, রবিবার এই খবর দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, বিটিসিএল পরীক্ষামূলকভাবে এমভিএনও নেটওয়ার্ক চালুর অনুমোদন পেয়েছে। ইতিমধ্যেই একটি টিম এটি নিয়ে কাজ করছে এবং দ্রুতই পাইলট প্রকল্প শুরু হবে।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক পোস্টে তিনি লিখেছেন,"বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ট্রিপল প্লে ও কোয়াড প্লে নিয়ে আসছে বিটিসিএল। এতে মোবাইল ভার্চ্যুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমভিএনও), মোবাইল সিম, আলাপ ও জিপন সেবা থাকবে। পাশাপাশি পাওয়া যাবে আনলিমিটেড ভয়েস ও ডেটা। এ ছাড়া দেশি–বিদেশি বিভিন্ন ওটিটি বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সেবা পাওয়া যাবে।"
এর আগে গ্রাহক পর্যায়ে বাণিজ্যিক ভাবে দেশে প্রথমবারের মতো ফাইভ-জি চালু হয়েছে। ভয়েস ওভার এলটিই (ভোল্টি ) ও ভয়েস ওভার ওয়াইফাই সুবিধাও পুরোদমে চালু এবং প্রাইভেট ফাইভ-জি চালুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এমন বাস্তবতায় বিশেষ সহকারী আশা করছেন, দ্রুতই লার্জ পাবলিক ইনডোর (এলপিআই), স্মল সেল এবং নেটওয়ার্ক স্লাইসের মতো টেলিকম সার্ভিসগুলো চালু হবে। নতুন নীতিমালায় এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৭০০ মেগাহার্জ তরঙ্গের অকশনও ডাকা হয়েছে।
এসব বিষয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, প্রায় সব স্তরের মাফিয়ারা কানেক্টিভিটিকে কেন্দ্র করে টেলিকম খাতকে জিম্মি করে রেখেছিল। তার মতে, এর ফলে টেলিকম কানেক্টিভিটি এতদিন 'টোল প্লাজা' হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অতি সামান্য বিনিয়োগ করে কেউ যেন আর রেন্ট সিকিং করতে না পারে, সরকার সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার কানেক্টিভিটি হাইওয়েকে টোল প্লাজা মুক্ত করতে চায়। এ জন্য ফাইবার অপটিক উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এতে ফাইবার অ্যাক্সেস এবং ডেটা ফ্লোতে আর কোনো অবকাঠামোগত বাধা থাকবে না।
'টেলিকম খাতকে কেবল ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ডিজিটাল সার্ভিসভিত্তিক শিল্পে রূপান্তর করাই সরকারের লক্ষ্য। বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের বাজার কেবল ডেটা ভলিউম (MB/GB) কেন্দ্রিক। কিন্তু প্রয়োজন ছিল সেবা কেন্দ্রিক প্যাকেজ'- যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই নতুন শিল্পে এড-টেক, এগ্রো-টেক, হেলথ-টেক, ফিন-টেক এবং ওটিটি-ভিত্তিক ডিজিটাল সার্ভিসের বড় সম্ভাবনা তৈরি হবে। নতুন নীতি Telecommunications network and licensing policy 2025 এই রূপান্তরের ভাবনা থেকেই তৈরি করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির সব প্রতিষ্ঠানকে ধীরে ধীরে সেবামূলক খাতে মাইগ্রেট করানোই মূল পরিকল্পনা।
উপদেষ্টা বলেন, টেলিকমকে কেবল কানেক্টিভিটি ব্যবসায় সীমাবদ্ধ রেখে এই শিল্পকে 'বনসাই' করে রাখা হয়েছিল। এই বামন দশা থেকে মুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সাফল্য আসবে যখন সরকার ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (DPI) এবং ইলেকট্রনিক আইডেন্টিটি লেয়ারকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলি শেষ করতে পারবে।
ব্যক্তিগত উপাত্ত ও গোপনীয়তা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনার জন্য সরকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি কাঠামো তৈরি করেছে। এগুলো হলো: পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫ এবং ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অর্ডিন্যান্স ২০২৫। এর মাধ্যমে আইনি ভিত্তি, কানেক্টিভিটি থেকে সেবায় রূপান্তর, ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং নাগরিক সেবার মতো বিষয়গুলোতে নিশ্চিত করা হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জোর দিয়ে বলেন, সরকার দুর্বৃত্তায়ন ও অচলায়তন ভেঙে দিচ্ছে। তারা একটি সার্ভিস বেজড ইকোসিস্টেম গড়ছেন, যার দীর্ঘমেয়াদি সুফল দেশের সাধারণ মানুষ এবং জাতীয় অর্থনীতি পাবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালেও বিটিসিএল ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ট্রিপল প্লে চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এবার তা বাস্তবায়নে নতুন নীতিমালা ও গাইডলাইনের অধীনে এমভিএনও বাস্তবায়নে গত ২৭ আগস্ট বিটিসিএল ও টেলিটকের কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ডিবিটেক/এফআর/ইকে







