ডাকসেবা অধ্যাদেশ ২০২৫

ডাকসেবায় আসছে ই-স্ট্যাম্পিংসহ যুগান্তকরী ৮ পরিবর্তন

২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ০০:১৫  
ডাকসেবায় আসছে ই-স্ট্যাম্পিংসহ যুগান্তকরী ৮ পরিবর্তন

বাংলাদেশের ডাকব্যবস্থায় আসছে যুগান্তকারী রূপান্তর। বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ডাকের ডিজিটাল রূপান্তর, আধুনিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন সহ যে কোন ধরনের মাইগ্রেশন জনিত ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা জোরদার করার উপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে। ১৮৯৮ সালের প্রাচীন ‘পোস্ট অফিস অ্যাক্ট’ বিলুপ্ত করে তৈরি হচ্ছে নতুন এই ‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ, ২০২৫’। এটি আধুনিক ডাকসেবা, ডিজিটাল ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, উপাত্ত সুরক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা জোরদারে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে আশাবাদী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 

এই আশাবাদের পেছনে প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহের মধ্যে কয়েকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নাগরিকদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। এর কিছু অংশ নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে পোস্টও করেছেন এই প্রযুক্তিবিদ।

পোস্টে ফয়েজ তৈয়্যব  লিখেছেন, বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ডাকের ডিজিটাল রূপান্তর, আধুনিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঠিকানা স্থানান্তর, ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আইনটিকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দেওয়া হচ্ছে। এই আইনটির নাম হবে ‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ, ২০২৫’, যা পূর্ববর্তী পোস্ট অফিস অ্যাক্ট, ১৮৯৮ কে প্রতিস্থাপন করবে।

তার ভাষায়, আমরা মনে করি, সংশোধনীসমূহের মধ্যে বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। নতুন অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ডাকের অধীনে একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি ‘নিয়ন্ত্রণ উইং’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই উইং বাণিজ্যিক ডাক ও কুরিয়ার অপারেটরদের লাইসেন্স প্রদান, সেবা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। নিয়ন্ত্রণ উইং ডাক ও কুরিয়ার খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ডাক সার্বজনীন সেবার জন্য প্রাপ্য সরকারি সংস্থান প্রতিযোগিতামূলক সেবায় ব্যবহার না করে— তার জন্য আলাদা হিসাব রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে।

বিশেষ সহকারী জানান, অবৈধভাবে ডাক বা কুরিয়ার ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, যা পূর্বের সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার সীমা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।  এছাড়া, নতুন আইনে প্রচলিত ডাকটিকিটের পাশাপাশি চালু হচ্ছে ডিজিটাল ডাকটিকিট বা ই-স্ট্যাম্পিং। গ্রাহক অনলাইনে অর্থ পরিশোধ করে নিরাপদ ডিজিটাল কিউআর কোড বা বারকোড পাবেন, যা বৈধ ডাকটিকিটের সমান আইনি স্বীকৃতি পাবে। আর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর সব নীতি ও অধিকার প্রযোজ্য হবে। অপারেটরদের গ্রাহকের তথ্য শুধুমাত্র সেবা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় তথ্য ধ্বংস এবং সাইবার নিরাপত্তার জন্য এনক্রিপশনসহ প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ডিজিটাল সেন্ট্রাল লজিস্টিক্স ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম, যা সব অপারেটরের মধ্যে আন্তঃপরিচালন নিশ্চিত করবে এবং গ্রাহক সহজেই তাদের পার্সেল ট্র্যাক করতে পারবেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ডাক সেবাকে এখন থেকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ডাককে অপরিহার্য বিবেচনা করে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ফলে জাতীয় সংকটকালে ডাক যানবাহন ও কর্মীরা অগ্রাধিকারমূলক চলাচলের সুযোগ পাবেন।বাংলাদেশ ডাকের নেটওয়ার্ককে দেশের জাতীয় অবকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে—যা যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক লেনদেনের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রবাসী ভোটার ও ডিজিটাল ঠিকানা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধিত) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী প্রবাসী ও অনিবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালট পরিবহনে ডাকসেবার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে নাগরিকদের ঠিকানা ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ ও আর্কাইভিংয়ের উদ্যোগ থাকছে। এতে পরিবারভিত্তিক ফ্যামিলি-ট্রি ম্যাপিং, জিও-ফেন্সিং ও লাইফ-সাইকেল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঠিকানা সংরক্ষিত থাকবে। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন বা চর বিলীন হওয়ায় ঠিকানা হারালে নতুনভাবে তা পুনঃনির্ধারণ করা যাবে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।

বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে।  
বাংলাদেশ ডাকের ডিজিটাল রূপান্তর, আধুনিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন সহ যে কোন ধরনের মাইগ্রেশন জনিত ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা জোরদার করার উপর গুরুত্ব তৈরিতে বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে। অর্থাৎ আইনটিকে সম্পূর্ণ নতুন রুপ দেয়া হচ্ছে যা ‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ, ২০২৫  নামে অভিহিত হবে এবং পূর্ববর্তী Post Office Act, 1898 কে প্রতিস্থাপন করবে।আমরা মনে করি সংশোধনীসমূহের মধ্যে কয়েকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। 

এক নজরে ডাকসেবা অধ্যাদেশশের যুগান্তকারী ৮ পরিবর্তন:

১. আধুনিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো 

• নিয়ন্ত্রণ উইং গঠন: পুরাতন আইনে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের ধারণা থাকলেও, নতুন অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ডাকের অধীনে একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি নিবেদিত নিয়ন্ত্রণ উইং (Regulation Wing) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা সকল বাণিজ্যিক ডাক ও কুরিয়ার অপারেটরদের লাইসেন্স প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করবে।

• প্রতিযোগিতা ও বৈষম্যহীনতার তদারকি: নিয়ন্ত্রণ উইং এই খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করবে। বিশেষত, বাংলাদেশ ডাক যেন সার্বজনীন সেবার জন্য প্রাপ্য সরকারি ভর্তুকি বা সংস্থান অন্য প্রতিযোগিতামূলক সেবার ক্ষতিপূরণে ব্যবহার না করে, তার জন্য আলাদা হিসাব (separate accounts) বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

• লাইসেন্সবিহীন কার্যক্রমের জন্য কঠোরতম জরিমানা: বৈধ লাইসেন্স ছাড়া ডাক, কুরিয়ার বা পার্সেল ব্যবসা পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ প্রশাসনিক জরিমানা পূর্বের ৫০ হাজার টাকা (বা পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা) থেকে বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ১০ লক্ষ টাকা (দশ লক্ষ) পর্যন্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।

২. ডিজিটাল রূপান্তর এবং উপাত্ত সুরক্ষা (Digital Transformation and Data Protection)

• ডিজিটাল ডাকটিকিট ও ই-সেবা: প্রচলিত ডাকটিকিটের পাশাপাশি ডিজিটাল ডাকটিকিট বা ই-স্ট্যাম্পিং চালু করা হয়েছে। গ্রাহক অনলাইনে পরিশোধ করে সুরক্ষিত ডিজিটাল কিউআর কোড বা বারকোড পাবেন, যা ছাপানো বা মোবাইল ডিভাইসে প্রদর্শিত হইলেও বৈধ ডাকটিকিটের সমতুল্য আইনি স্বীকৃতি পাবে।

• ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা: নতুন আইনে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর অধীন সকল নীতি ও অধিকার প্রযোজ্য করা হয়েছে। অপারেটরদেরকে গ্রাহকের তথ্য শুধু সেবা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য মুছে ফেলা (destroy), এবং সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রযুক্তিগত ও সাংগঠনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (যেমন এনক্রিপশন) গ্রহণের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।

• কেন্দ্রীয় ট্র্যাকিং ও আন্তঃপরিবাহিতা: একটি ডিজিটাল সেন্ট্রাল লজিস্টিক্স ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সকল বাণিজ্যিক অপারেটরের আন্তঃপরিচালন (Interoperability) নিশ্চিতকরণের বিধান করা হয়েছে, যাতে গ্রাহকরা সহজে ট্র্যাকিং তথ্য পেতে পারেন।

৩. বাংলাদেশ ডাকের প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি (Enhanced Institutional Status of Bangladesh Post)

• জরুরী সেবা হিসাবে ঘোষণা: ডেজিগনেটেড অপারেটর কর্তৃক পরিচালিত ডাকসেবা জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য হওয়ায় এটিকে জরুরী সেবা (Emergency Service) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই মর্যাদার কারণে জাতীয় সংকটকালে ডাক যানবাহন এবং আবশ্যিক জনবল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক চলাচল ও প্রবেশাধিকার সুবিধা লাভ করবে।

• জাতীয় অবকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি: বাংলাদেশ ডাকের নেটওয়ার্ককে কেবল একটি সেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা হিসেবে নয়, বরং দেশের জাতীয় সংযোগ, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক লেনদেনের মেরুদণ্ডস্বরূপ একটি অপরিহার্য ন্যাশনাল ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

• সরকারি যোগাযোগের অগ্রাধিকার: কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় সরকারের সকল সংস্থা, মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহকে দাপ্তরিক চিঠি, ডকুমেন্ট এবং স্বল্প ওজনের পার্সেল দেশের অভ্যন্তরে বা বিদেশে প্রেরণের জন্য ডেজিগনেটেড অপারেটরের ডাকসেবা ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

• চিফ কন্ট্রোলার অফ স্ট্যাম্পস দপ্তরের প্রতিষ্ঠা: সকল প্রকার পোস্টাল ও নন-পোস্টাল স্ট্যাম্পের (রাজস্ব ও অন্যান্য স্ট্যাম্প) প্রশাসনিক, আর্থিক ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ডাকের অধীনে চিফ কন্ট্রোলার অফ স্ট্যাম্পস এর দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

৪. নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ (Security, International Standards, and Border Control)

• ইলেকট্রনিক অগ্রিম ডাটা (EAD) আবশ্যিকতা: দেশের সীমান্ত অতিক্রম করা সকল ডাক, কুরিয়ার বা পার্সেলের জন্য কাস্টমস ও নিরাপত্তা সংস্থার নিকট ইলেকট্রনিক অগ্রিম তথ্য (যেমন প্রেরক-প্রাপক, মূল্য, সামগ্রীর বর্ণনা) পূর্বেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রেরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

• কেওয়াইসি (KYC) যাচাইকরণ: ডাক ও পার্সেল সেবার অপব্যবহার রোধে, বিশেষত বিদেশগামী বা উচ্চমূল্যের অভ্যন্তরীণ চালানের ক্ষেত্রে, প্রেরক ও প্রাপকের সরকারি শনাক্তকরণ দলিল (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট) পরীক্ষা ও তথ্য নথিভুক্ত করার কেওয়াইসি যাচাইকরণ (KYC) প্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

• সক্রিয় নিরাপত্তা কৌশল: ডেজিগনেটেড অপারেটর ও সকল লাইসেন্সধারী অপারেটরদের প্রো-অ্যাকটিভ নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে কর্মীদের নিয়মিত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, মেইল অফিস ও কেন্দ্রে এক্স-রে স্ক্যান এবং জরুরি অবস্থার জন্য কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত।

৫. ডাক জীবন বীমা (Postal Life Insurance)

নতুন আইনে ডাক জীবন বীমা (PLI) "অধিকারী ডাকসেবা" হিসেবে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা পেয়েছে। প্রধান পরিবর্তনসমূহ হলো:

• রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি: ডাক জীবন বীমার পলিসিসমূহ বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি সহকারে পরিচালিত হইবে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে করা চুক্তির সমতুল্য নিরাপত্তা প্রদান করিবে। এটিকে দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা গ্যারান্টিযুক্ত সঞ্চয়ী কার্যক্রম হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

• তহবিল ও ট্রাস্টিশিপ: পলিসি-গ্রহীতাদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে ‘নো প্রফিট, নো লস’ ভিত্তিতে একটি "ডাকঘর বীমা তহবিল" পরিচালিত হইবে, যার ট্রাস্টির দায়িত্ব পালন করিবেন বাংলাদেশ ডাকের মহাপরিচালক।

• ব্যবস্থাপনা: বীমা ঝুঁকি ও তহবিলের স্থিতিশীলতা নিরূপণের জন্য স্বীকৃত অ্যাকচুয়ারি দ্বারা নিয়মিত একচুয়ারি কার্য সম্পন্ন করিবার বিধান রাখা হয়েছে। গ্রাহকরা পলিসি জামিন রাখিয়া জমাকৃত টাকার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন।

৬. ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক (Postal Savings)

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকও "অধিকারী ডাকসেবা" হিসেবে বিবেচিত হইবে। মূল পরিবর্তনগুলো হলো:

• ট্রেজারি একক হিসাব (TSA): সকল আর্থিক সেবার সামষ্টিক সঞ্চিতি সুনির্দিষ্ট ট্রেজারি সিঙ্গেল একাউন্ট (TSA) এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সঞ্চিত থাকিবে।

• বিনিয়োগের নতুন ব্যবস্থা: বাংলাদেশ ডাক এই সঞ্চিতি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ট্রেজারি বন্ড বা অন্য কোনো ট্রেজারি ইন্সট্রুমেন্ট এর বিপরীতে বিনিয়োগ করিতে পারিবে।

• মুনাফার হার: আমানতকারীদের মুনাফার হার ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগকৃত সঞ্চিতি'র লভ্যাংশের অংশবিশেষ থেকে নির্ধারিত হইবে।

• ডিজিটাল রূপান্তর: বাংলাদেশ ডাক তার সকল ধরনের আর্থিক সেবা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণের প্রয়োজনে ডিজিটাল রূপান্তরের এখতিয়ার সংরক্ষণ করিবে।

৭. প্রবাসী ভোটারের জন্য পোস্টাল ব্যালট (Postal Ballot for Expat Voting)

পোস্টাল ব্যালট পরিবহন: গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধিত) আইন ২০২৩ অনুযায়ী সকল ধরনের নির্বাচনের পোস্টাল ব্যালট পরিবহনসহ নির্বাচনী ব্যবস্থায় ডাকসেবার ব্যবহারসহ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল পরীক্ষার খাতা ও ফলাফল পরিবহনে ডেজিগনেটেড অপারেটর কর্তৃক পরিচালিত ডাকসেবা ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে হইবে।

৮. ঠিকানা আর্কাইভিং 
ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে সকল নাগরিকের ঠিকানাসমূহকে এমনভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা হইবে, যাহাতে ডিজিটাল অ্যাড্রেস তৈরি হইবার পাশাপাশি ঠিকানা-কেন্দ্রিক ফ্যামিলি-ট্রি ম্যাপিং সহ জিও-ফেন্সিং নির্ধারন করা হইবে; এবং এইসব ডেটার স্থায়ী লাইফ-সাইকেল নির্ধারণ করিয়া ডিজিটাল আর্কাইভিং করা হইবে। অনুরূপ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এমনভাবে পরিচালিত হইবে, যাহাতে জলবায়ু পরিবর্তন বা নদীভাঙ্গনসহ অন্যান্য মাইগ্রেশনজনিত কারণে ঠিকানা হারানোর প্রেক্ষিতে (যেমন চর বিলীন হওয়া ও জেগে ওঠা কিংবা ভূমি পুনরুদ্ধার ইত্যাদি) পুনরায় যথাযথভাবে ঠিকানা চিহ্নিত ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা যায়।