পেপ্যাল চালু করতে মীর স্নিগ্ধের খোলা চিঠি

১১ জুন, ২০২৫  
১১ জুন, ২০২৫  
পেপ্যাল চালু করতে মীর স্নিগ্ধের খোলা চিঠি

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক লেনদেন সেবা পেপ্যাল চালুর অনুরোধ জানিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মীর মুগ্ধর জমজ ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) মীর স্নিগ্ধ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে ট্যাগ (যুক্ত) করে একটি পোস্টে এ চিঠিটি লেখেন মীর স্নিগ্ধ।

চিঠিটিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করছি এবং ২০২২ সালে একজন Top Rated Freelancer হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছি। আমার ক্যারিয়ার এবং শহীদ মুগ্ধদের মতো ফ্রিল্যান্সারদের অর্জন সম্পর্কে অনেকেই অবগত।

শুরুর দিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেও, সময়ের সাথে সাথে এটি আমার মূল পেশায় রূপ নেয়। ঘরে বসে বৈশ্বিক বাজারে কাজ করার সুযোগ থাকায় ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে তরুণদের জন্য এক বড় সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।’

স্নিগ্ধ আরও বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে হাজার হাজার দক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত করছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে ‘পেপ্যাল’ এর অনুপস্থিতির ফলে এই ফ্রিল্যান্সারদের একটি মৌলিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এই একটি সমস্যার কারণে আমরা বহু আন্তর্জাতিক কাজ হাতছাড়া করি। ”

মীর স্নিগ্ধ জানান, ‘মার্কেটপ্লেসের বাইরে অনেক ক্লায়েন্ট এবং কোম্পানি কাজ দিতে চাইলেও PayPal-এর অনুপস্থিতির কারণে আমরা সেই সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারি না। মার্কেটপ্লেসে কাজ করলেও উচ্চ কমিশন দিতে হয়, যা ফ্রিল্যান্সারদের এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য ক্ষতিকর। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেখানে PayPal স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো সম্ভাবনাময় ডিজিটাল অর্থনীতির দেশে আজও এটি চালু না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘একবার চিন্তা করুন–একজন ক্লায়েন্ট যদি মাসে $১২০০ ডলারে আমাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চান, শুধুমাত্র PayPal-এর অভাবে সেই কাজটি আমি গ্রহণ করতে পারছি না। এতে শুধু আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।’

চিঠিতে মীর স্নিগ্ধ আরও লেখেন, ‘এই চিঠির মাধ্যমে আমি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মাহফুজ আলম এবং মাননীয় বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা এই সমস্যা সম্পর্কে অবগত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে, দেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে আমি নিজের সাধ্যমতো অবদান রাখছি। আজ, দীর্ঘদিন কাজ করার পর প্রথমবারের মতো একটি অনুরোধ করছি—বাংলাদেশে PayPal সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হোক।’

সবশেষে স্নিগ্ধ লেখেন, ‘এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য যদি কোথাও আমার মতো ফ্রিল্যান্সারদের সহায়তা প্রয়োজন হয়—আমি সদা প্রস্তুত। প্রয়োজন হলে যেকোনোভাবে যুক্ত হয়ে এই বিষয়ে কাজ করতে আমি আগ্রহী। আমাদের মতো যারা চুপচাপ এই পেশায় দেশের হয়ে কাজ করছে, তাদের জন্য এটি হবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই চাওয়াটি পূরণ হলে তা শুধু আমার নয়, মুগ্ধর মতো হাজারো তরুণ ফ্রিল্যান্সারের ভবিষ্যতের জন্য পথ তৈরি করবে এবং দেশের অর্থনীতিও এক নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে পাবে।’