বিটিআরসি’র লাইসেন্স পেলো স্টারলিংক

প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভাবে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার লাইসেন্স পেলো মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্টারলিংক। মঙ্গলবার বিকেলে এই লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিটিআরসি সূত্র। সূত্র মতে, নন জিওষ্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (NGSO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেডের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগামী ১০ বছরের মেয়াদে বিটিআরসি হতে স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেডের অনুকূলে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ, বিটিআরসি ভবনে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে “ননজিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট অপারেটর লাইসেন্স” ও “রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স” নামে দুটি পৃথক লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়।
সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বিটিআরসি হতে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে এই লাইসেন্স দুটি হস্তান্তর করা হয়। প্রথম লাইসেন্সটি হস্তান্তর করা হয় বিটিআরসি’র লাইসেন্সিং বিভাগ হতে; যার মাধ্যমে স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে এবং দ্বিতীয় লাইসেন্সটি হস্তান্তর করা হয় বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগ হতে; যার আওতায় ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য অনুমোদিত তরঙ্গ ব্যবহার করাসহ বেতার যন্ত্র ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ আমদানি, ও ব্যবহার করতে পারবে।
প্রথম লাইসেন্সটি লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক লেঃ কর্ণেল সৈয়দ মোঃ তৌফিকুল ইসলাম স্টারলিংক গ্লোবাল লাইসেন্সিং এন্ড মার্কেট এভিয়েশন এর পরিচালক রেবেকা স্লিক হান্টার এর নিকট হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক জনাব আশীষ কুমার কুন্ডু এবং উপপরিচালক জনাব মো নাহিদুল হাসান।
অপরদিকে দ্বিতীয় লাইসেন্সটি রেবেকা স্লিক হান্টার এর নিকট হস্তান্তর করেন স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক ড. মোঃ সোহেল রানা । এ সময় স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আমিনুল হক এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাকারিয়া ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, চলতি বছরের গত ২৯ মার্চ, স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন লাভ করে। বিডার অনুমোদন পাওয়ার পর, দেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ৩১ মার্চ বিটিআরসিতে লাইসেন্সের আবেদন করে স্টারলিংক। বিটিআরসির এই লাইসেন্স প্রাপ্তি স্টারলিংকের জন্য বাংলাদেশে তাদের সেবা চালু করার পথ প্রশস্ত করলো।
এদিকে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট–সেবার ডেমুটেস্ট করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি। তবে বাণিজ্যিক সেবা দিতে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশী অংশীদারদের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ মার্চ কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে গত ২৫ মার্চ Non-Geostationary Orbit (NGSO) Satellite Services Operator In Bangladesh লাইসেন্সিং গাইডলাইন জারি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ওই দিনই বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ২৯৪তম কমিশন সভায় স্টারলিংকের অনুকূলে আবেদনকৃত লাইসেন্স ইস্যুর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
স্টারলিংককে অনুমোদন, তিন মাসের মধ্যে সেবা চালু
এনজিএসও নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদন ও প্রক্রিয়াকরণ ফি পাঁচ লাখ টাকা, লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ডলার এবং বার্ষিক ফি ৩০ হাজার ডলার। এ ছাড়া, প্রতিটি টার্মিনালের জন্য বার্ষিক স্টেশন বা টার্মিনাল ফি হিসেবে এক ডলার করে আদায় করা হবে। তবে শুধুমাত্র আইওটি সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত টার্মিনালের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিতে পাঁচ বছর আগে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে স্টারলিংক। ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি হওয়ায় গভীর সমুদ্র বা পাহাড়ি এলাকার মতো দুর্গম জায়গাতেও গেমিং, স্ট্রিমিং ও দ্রুত ডাউনলোড নিশ্চিত করতে পারে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রেগুলেটরি ও লাইসেন্সিং নীতিমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে যে খসড়া গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে তাতে নজরদারি ও আড়িপাতার সুযোগ রাখা হয়েছে এবং সেটি চূড়ান্তভাবে বহাল থাকলে ইন্টারনেট সেবার ওপর সরকারের এখন যে খবরদারির সুযোগ আছে তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
ফাইবার অপটিক বা ক্যাবল ব্যবহার করে এখন যারা ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন সেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের শর্ত থাকে- সেটিই নির্ধারণ করবে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা খাতে এর প্রভাব কেমন বা কতটা হবে।