সোমবার শুরু হওয়া চারদিনের সম্মেলনে যা থাকছে
নাসার সঙ্গে চুক্তি হবে বিনিয়োগ সম্মেলনে; লাইভ হবে বিডা অনুমোদিত স্টারলিংক-এ

সোমবার থেকে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হবে বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। এই সম্মেলনে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) সঙ্গে চুক্তি করবে বাংলাদেশ। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগের পরীক্ষামূলক প্রদর্শন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রদর্শনী দেখবে বাংলাদেশ। স্টারলিংক এর সার্ভিস দিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্মেলনের লাইভ হবে। তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকায় স্টারলিংক প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইলন মাস্ক এই সম্মেলনে আসছেন না।
রবিবার (৬ এপ্রিল) সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে গিয়ে এমব তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যারা সম্মেলনে যাবেন তারা পার্সোনাল ডিভাইসেও স্টারলিংকের কানেক্ট হতে পারবেন। একটা এক্সপেরিয়েন্স করতে পারবেন। গত মাসের ২৯ তারিখে এনজিএসও পলিসি আমরা ফাইনালি পাবলিক ডোমেইনে রোল আউট করে দিয়েছি। এরপর তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিডা রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। এখন এনজিএসও লাইসেন্স নেয়ার জন্য তারা সম্ভবত আজ আবেদন করবে। আইনের মধ্যেই যতদ্রুত সম্ভব তাদেরকে এনজিএসও লাইসেন্স দেয়া হবে। লাইসেন্স পাওয়ার পরের দিন থেকেই তারা কমার্শিয়াল অপারেশনে যেতে পারেন।
তবে লাইসেন্স পাওয়ার পর বাংলাদেশে স্টারলিংক এর ডিভাইসগুলো আসতে একটু সময় লাগতে পারে বলেও জানান বিডা চেয়ারম্যান।
আশিক মাহমুদ বিন হারুন আরো জানান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। আগামীকাল ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিনব্যাপী সম্মেলনে আয়োজক বাংলাদেশসহ অর্ধশতাধিক দেশের সাড়ে ৫ শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশ নেবেন। আগামী ৯ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। সম্মেলন অনুষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত হবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়া কর্নার থাকবে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি পাঁচজন বিনিয়োগকারীকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে আমি সুযোগ হিসেবেই দেখছি। কারণ যে দৃষ্টিভঙ্গী থেকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে— ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টটেটিভের একটা রিপোর্ট আছে বাংলাদেশের বিষয়ে। বাংলাদেশে বিনিয়গের যে অবস্থা সেটির বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। সেই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই রিপোর্টে আমাদের জন্য বেসিক কিছু সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। আমাদের রেগুলেটরি কিছু রিফর্ম, কাস্টম ডিউটির ক্ষেত্রে, দুর্নীতি— এরকম বেশ কয়েকটি বিষয়ে রিফর্মের কথা বলা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো কিন্তু আমরাও করতে চাচ্ছিলাম। অন্তর্বর্তী সরকার চাচ্ছিল যে, বাংলাদেশের যে বিনিয়োগ ব্যবস্থা এখানে একটা বড় ধরনের সংস্কার হোক, যাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যবসা করা সহজ হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের সম্মেলন থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাত, কৃষি পণ্যজাতকরণ, ফার্মাসিউটিক্যাল, ডিজিটাল ইকোনোমি এবং পোশাক শিল্প- এই ৫ শিল্প খাত থেকে বেশি বিনিয়োগ আসবে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং, কারখানা স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করানো হবে। রাজনৈতিক শঙ্কা কাটাতে সম্মেলনে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অভ্যাগত অতিথিদের বৈঠক করানো হবে। ভবিষ্যতে যেনো যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিনিয়োগ বারে সে জন্য সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকই হবে বেশি।
সম্মেলনের প্রথম দিন ৬০ জনের বেশি উদ্যোক্তাকে নিয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইট চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড এবং মিরেরসরাইয়ে ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনোমিক জোন ভিজিট করবে। পাশাপাশি ইন্টার কন্টিনেন্টোলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে একটি সেমিনার। ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। উপদেষ্টা সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। দিনব্যাপী কংগ্রেশন ও ম্যাচমেকিং হবে। ৮ এপ্রিল বিনিয়োগকারীরা যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের জার্মান ইকোনোমিক জোনে। ফিরে দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।