মাদক অধিদপ্তরের ডিজিটাল সাইনেজেও ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকার গেন্ডারিয়া (দক্ষিণ) কার্যালয়ের ভবনে ছাদের বাইরের দিকে একটি ডিজিটাল সাইনেজ (ডিসপ্লে বোর্ড) আছে। ২৮ ঘণ্টাই সেখানে ‘মাদককে না বলুন’ কিংবা মাদকবিরোধী নানা স্লোগান দেখানো হয়। কিন্তু হাঠৎই ১২ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে ওই ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে- ‘ছাত্রলীগ আবারো ভয়ংকর রূপে ফিরবে’। আচমকা এমন ভয়ঙ্কর বার্তা দেখে সেখানে তারা জড়ো হয়ে কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন স্থানয়ীরা।
সেসময় গেন্ডারিয়া থানার টহল পুলিশ এসআই মো. আব্দুর কাদির ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে তারা স্থানীয়দের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু শাহেদ খান ঘটনার সতত্য নিশ্চিত করে জানান, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি জিডি করেছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও একটি জিডি করতে এসেছেন।।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে অধিদপ্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানেরর কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি সংবাদ কর্মীরা। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস্ ও গোয়েন্দা), অ্যাডিশনাল ডিআইজি তানভীর মমতাজ জানিয়েছেন, ‘সোমবার বিকেলে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’-এই লেখাটি কীভাবে ডিসপ্লেতে এলো সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে দক্ষিণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মানজুরুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, ডিসপ্লে বোর্ডটি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করায় তাদের কাছে এর ফুটেজ নেই। তবে নতুন যে পেনড্রাইভ লাগানো আছে, সেখানে লেখা থাকলে থাকতেও পারে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পরিচালক লিখিতভাবে প্রধান কার্যালয়কে জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি এই অফিসটিতে রাতের বেলা কেউ যেন প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রধান ফটক আটকে রাখা হয়। থাকেন নিরাপত্তাকর্মীরাও। এরপরও ভবনের উপরে যেতে হলে সেখানেও দুজন নিরাপত্তাকর্মী থাকেন। যাদের কাছে ছাদে ওঠার চাবিও থাকে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ভবনটির ভেতরের কারোর সঙ্গে যোগসাজশে না থাকলে পেনড্রাইভ পরিবর্তন করা সম্ভব না। যারা এ কাজটি করেছে তারা আওয়ামী লীগের দোসর বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহ করছে। অধিদপ্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে। যারা অধিদপ্তর বা বর্তমান সরকাররের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
এরই মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন নিজেদের ইচ্ছা মতো সিন্ডিকেট তৈরি করে অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে মাঝেমধ্যেই অধিদপ্তরে ঘটছে নানা অনিয়ম। যা প্রায় সময়ই গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও নানা কৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা।
এর আগেও কমলাপুর স্টেশন, খুলনা রেল স্টেশনসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সরকারি অফিস কিংবা অধিদপ্তরের এ ধরনের ডিসপ্লে বোর্ডে ছাত্রলীগের স্লোগান ভেসে ওঠার অভিযোগ রয়েছে।
গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে ওঠে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ লেখা। এর আগে নোয়াখালী, ফেনীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।