ডাকসেবা অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ

২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:০২  
ডাকসেবা অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ

১৮৯৮ সালের ঔপনিবেশিক আইনের বদলে আসছে নতুন ‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ ২০২৫’। প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর ডাক ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনতে এই খসড়া তৈরি করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। কুরিয়ার রেগুলেশন, ডেটা প্রাইভেসি, কনজিউমার প্রটেকশনসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে খাত সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়ে মেইল করার আহ্বান জানিয়েছেন ডাকের মহাপরিচালক। মতামত দেয়া যাবে [email protected] ঠিকানায়।   

খসড়ায় বাংলাদেশ ডাকের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবিত প্রক্রিয়া এবং দ্রুততর ও উন্নত সেবা হিসেবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ডাক সেবা, ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিং ও ডেলিভারি, ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এভাবে নতুন অধ্যাদেশে বেশ কিছু পরিবর্তন ও নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে পোস্টাল লাইফ ইনস্যুরেন্স, সেভিংস ব্যাংক সম্পর্কিত বিধান, কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা সুরক্ষা, আন্তঃসংযোগযোগ্যতা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বা ডেটা প্রাইভেসি উল্লেখযোগ্য। 

এছাড়া এতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে পোস্টাল বিভাগ “জাতীয় ডাক অপারেটর” হিসেবে কার্যকরী হবে, এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (International Standards) অনুসরণ করবে।

যদি এই নতুন অধ্যাদেশ আইন হিসেবে পাস হয়ে যায়, তাহলে এটি দেশের পুরনো ব্যবস্থাপনাগত আইনগুলোর মধ্যে অন্যতম পুরনো আইনকে প্রতিস্থাপন করবে। সেই লক্ষ্যে খসড়া অধ্যাদেশে এই হালনানাগদ করণ প্রক্রিয়াকে বাংলাদেশের ডাক ও কুরিয়ার খাতকে আধুনিক, ডিজিটাল ও বাণিজ্যবান্ধব কাঠামোয় রূপ দিতে একটি সর্বাঙ্গীন সংস্কার পরিকল্পনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “ডাকসেবা অধ্যাদেশ ২০২৫” বাংলাদেশ ডাককে শুধু চিঠিপত্র পরিবহনের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সেবা নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে—যেখানে সরকারি সেবা, আর্থিক লেনদেন, ই-কমার্স ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা একসাথে সংযুক্ত থাকবে।

নতুন আইনে বাংলাদেশ ডাককে দেশের জাতীয় ডাক অপারেটর (Designated Operator) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শুধু চিঠিপত্র নয়, আর্থিক লেনদেন, ই-কমার্স পণ্য, কুরিয়ার ও লজিস্টিকস সেবা পরিচালনা করবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি—সব ডাক ও কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানকেই সরকারের অনুমোদন বা লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া ডাক বা কুরিয়ার ব্যবসা চালালে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন আইনে যুক্ত হওয়া গ্রাহক সুরক্ষা, তথ্যের গোপনীয়তা ও ডেটা সুরক্ষা-সংক্রান্ত ধারায় ডাক সেবার মাধ্যমে পাঠানো কোনো তথ্য বা উপাত্ত অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করলে দায়ী প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করতে হবে।

এতে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, পোস্টাল লাইফ ইনস্যুরেন্স, এক্সপ্রেস কুরিয়ার, ডিজিটাল ও মোবাইল পোস্ট অফিসের মতো আধুনিক সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকার বলছে, এই আইনের মাধ্যমে ডাক বিভাগকে “শুধু বার্তা বাহক নয়, বরং ডিজিটাল যুগের সেবামূলক নেটওয়ার্ক”-এ রূপ দেওয়া হচ্ছে।

গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায়ও সার্বজনীন ডাকসেবা পৌঁছে দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ডাক ইউনিয়নের (UPU) নিয়ম মেনে বাংলাদেশ ডাক বিদেশি ডাক ও ই-কমার্স সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে।

অধ্যাদেশে উল্লেখ আছে, ডাক বিভাগের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরকারি ট্রেজারি সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট (TSA) ব্যবস্থায় চলবে এবং সেবা মনিটরিং হবে সফটওয়্যারভিত্তিক ডিজিটাল সিস্টেমে। তবে সরকারি, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ডাক লেনদেন এই আইনের সাধারণ বিধান থেকে অব্যাহতি পাবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চিঠি ও পণ্য প্রেরণেও নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে।