ফেসবুকে নাহিদের ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য

১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১৯:০১  
ফেসবুকে নাহিদের ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, জামায়াতে ইসলামীর তথাকথিত ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) আন্দোলন’ একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা। তার অভিযোগ- জামায়াত কখনোই সংস্কারমূলক আলোচনায় অংশ নেয়নি- না জুলাই অভ্যুত্থানের আগে, না পরে। তারা কখনোই কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি কিংবা একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

১৯ অক্টোবর, রবিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে ইংরেজিতে লেখা এক পোস্টে নাহিদ এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে পোস্টটি পাওয়া যায়নি। পোস্টটি দেখা গেছে দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। তার এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদলসহ একাধিক ছাত্রসংগঠনের নেতারা। দলীয় বিবেচনায় এই মন্তব্যের বাজার কাটতিও বেশ। অল্প সময়ে শেয়ার ও বিপুল মন্তব্য পড়েছে। তবে মন্তব্যের ঘরে বেশ যুক্তি তর্ক চলছে। আছে তীর্যক সমালোচনাও। 

কেউ লিখেছেন, ‘নাহিদ আজকে যা বলছে তা একটা অভদ্র রাজনৈতিক আচারণ। অভ্যুত্থানের একজন নেতা হিসাবে তার এধরনের বেহিসাবি কথা তাকে আরো বেশি দূরে সরিয়ে দিবে।’ কেউবার বলছেন, ‘আমি বিএনপি আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে এনসিপিকে সমর্থন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক জনকল্যাণমুখী কোনো ভিশন দেখছি না। আছে শুধু অন্য দলের সমালোচনা আর জুলাই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি।’

নাহিদ ইসলামের পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুতফা। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা সবকিছুতেই বড় দেরি করছেন। এটা আবার আপনারা পরিকল্পিত কৌশল হিসেবে করছেন না; এটুকু আশা করি।’

 

পোস্টে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আন্দোলনটি ইচ্ছাকৃতভাবে গঠিত হয়েছিল ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়া ভ্রান্ত পথে চালিত এবং জনগণের অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র ও সংবিধান পুনর্গঠন-সংক্রান্ত জাতীয় সংলাপ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য।

নাহিদ লেখেন, ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠনের মূল সংস্কার দাবি ছিল সংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। আমরা এমন ভিত্তিগত সংস্কারের চারপাশে একটি গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম এবং জুলাই সনদের আইনি কাঠামো বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম।

তিনি আরও লেখেন, কিন্তু জামায়াত ও তার মিত্ররা এ এজেন্ডা ছিনতাই করে একে সুকৌশলে পিআর ইস্যুতে নামিয়ে আনে এবং বিষয়টি নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল না সংস্কার, বরং ছিল কৌশলী প্রতারণা।

নাহিদ জানান, ঐকমত্য কমিশনে জামায়াতের হঠাৎ করে ‘সংস্কারের’ পক্ষে অবস্থান নেওয়া আদর্শগত বিশ্বাসের প্রকাশ ছিল না, বরং এটা ছিল একটি রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ, সংস্কারের ছদ্মবেশে নাশকতা।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণ এ প্রতারণা পরিষ্কারভাবে বুঝে গেছে। তারা এখন জেগে উঠেছে এবং আর কখনো কোনো ভুয়া সংস্কারবাদী বা ষড়যন্ত্রকারী শক্তির দ্বারা প্রতারিত হবে না। না সর্বশক্তিমান, না এ দেশের সার্বভৌম জনগণ- কেউই আর কখনো অসৎ, সুবিধাবাদী ও নৈতিকভাবে দেউলিয়া শক্তিগুলো শাসন করার সুযোগ দেবে না।