শেষ হলো ষষ্ঠ বিপিও সম্মেলন

৮৫ হাজার কর্মসংস্থানের সঙ্গে বার্ষিক আয় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার

২৩ জুন, ২০২৫ ০০:০৬  
২৩ জুন, ২০২৫ ১০:৩১  
৮৫ হাজার কর্মসংস্থানের সঙ্গে বার্ষিক আয় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার

বহুমাত্রিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন ও উদ্ভবানী সল্যুশন দিয়ে দেশকে বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি ও আউটসোর্সিং বাজারে মেলে ধরার প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুই দিনের ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫। সম্মেলনে ৯টি সেমিনার ছাড়াও ২৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের সল্যুশনের প্রদর্শনী দিয়েছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, নীতিনির্ধারক, তরুণ পেশাজীবী এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা অংশ নিয়েছেন সম্মেলনে।  

সমাপনীতে বক্কো সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম জানিয়েছেন, (বাক্কো) এ পর্যন্ত ৮৫ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এই খাত থেকে বার্ষিক আয় ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

থিমভিত্তিক সেমিনার ও কর্মশালায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৮৬ জন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কর্পোরেট নেতা ও সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা। সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও আইটি পলিসি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উঠে আসে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা।  

সামিটে কর্মক্ষেত্রে নারী বিষয়ক সেমিনারে নারীর নেতৃত্ব, নিরাপদ পরিবেশ এবং সমান সুযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বক্তারা নারীর দক্ষতাকে বিপিও খাতের বিকাশে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। এই উদ্যোগ নারীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সম্ভাবনাময় কর্মপরিসরের বার্তা দেয়

তরুণদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও চাকরি মেলায় ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। বিপিও খাতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ কর্মশালা, যেখানে তাদের সামনে তুলে ধরা হয় আউটসোর্সিং শিল্পের সম্ভাবনা ও পেশাগত বিকাশের বাস্তব চিত্র। চাকরি মেলার মাধ্যমে শতাধিক তরুণ তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয় যেখান থেকে ১০০ এর অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।  

সামিটে আরো আয়োজন করা হয় ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ের ভূমিকা, এবং বৈশ্বিক অংশীদারত্ব ও আউটসোর্সিংয়ের ভবিষ্যৎ বিষয়ক গুরুত্ববাহী সেমিনারসমূহ যাতে অংশ নেন দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ, যারা আউটসোর্সিং খাতে অর্থপ্রবাহ সহজীকরণ, বৈশ্বিক বিনিয়োগ, অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ এবং টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন। 

২২ জুন রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, পররাষ্ট্র  সচিব (পূর্ব) ড. মুঃ নজরুল ইসলাম, আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাঈদ, বাক্কো সভাপতি  তানভীর ইব্রাহীম এবং সাধারণ সম্পাদক  ফয়সল আলিম।  

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে বাক্কো এবং বিপিও শিল্পের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আলোকপাত করেন তানভীর ইব্রাহীম। তিনি বলেন, “বাক্কো বর্তমানে ৪৩০-এর অধিক সদস্য নিয়ে দেশের বিপিও শিল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ পর্যন্ত আমরা ৮৫,০০০-এর বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি এবং বার্ষিক ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্ব অর্জন করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ লক্ষ টেকসই কর্মসংস্থান ও ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় নিশ্চিত করা, যা অর্জনে বাক্কো তার বলিষ্ঠ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। এই সামিট আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর অন্যতম মাইলফলক”। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “বিপিও খাত দেশের রপ্তানি আয়ের একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এই খাতের বিকাশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্বদা নীতিগত সহায়তা প্রদান করবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মুঃ নজরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের বিপিও খাতকে বিশ্বে তুলে ধরতে কূটনৈতিক মহলের আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই সামিট সেই আন্তর্জাতিক সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”

 আবু সাঈদ বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিপিও শিল্প প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তরুণদের কর্মসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আইসিটি অধিদপ্তর এই যাত্রায় পাশে থাকবে।”  

সভাপতির বক্তব্যে বিপিও শিল্পে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে  আইসিটি অধিদপ্তরের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “বিপিও শিল্পের অগ্রযাত্রা আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠছে। এই খাতের বিকাশে সরকার ও শিল্পখাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে। তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি জগতে যুক্ত করতে হলে তাঁদের হাতে সঠিক দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ পৌঁছে দিতে হবে। বিপিও সামিট সে সুযোগটিই তৈরি করে দিয়েছে, যেখানে আমাদের আগামী প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর রপ্তানি আয় তৈরির সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে।

সমাপনী বক্তব্যে বাক্কো সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম বলেন, “এই সামিটে অংশগ্রহণকারী সবাই আমাদের একটি শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তোলার পথ দেখিয়েছে। তরুণদের জন্য বিপিও এখন শুধু একটি চাকরি নয়, বরং একটি ক্যারিয়ার।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বৈশ্বিক আউটসোর্সিং ইকোসিস্টেমে অন্যতম শক্তি। তাঁদের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরতে আমরা সামিটে বিশেষ সেশন করেছি। ভবিষ্যতে বাক্কো ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়নে সরকার ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।”

সামিটে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের  কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ, যারা বাংলাদেশের বিপিও শিল্পের অগ্রযাত্রা ও বৈশ্বিক সক্ষমতা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। উপস্থিত ছিলেন প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী।

বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫-এর সফল বাস্তবায়নে দেশের খ্যাতনামা বিপিও, আইটিইএস, ব্যাংকিং ও প্রযুক্তি খাতের অগ্রণী প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখযোগ্য সহযোগিতার নিদর্শনস্বরূপ, ডায়মন্ড স্পন্সরশিপ ক্যাটাগরিতে যুক্ত হয়েছে রকি ডায়লার এবং স্কাই টেক গ্লোবাল লিমিটেড; প্লাটিনাম স্পন্সরশিপে অংশ নিয়েছে সিনার্জি আইটি সার্ভিসেস লিমিটেড ও ব্রোটেক্স টেকনোলোজিস লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিল সিনার্জি বিজনেস সল্যুশন। সেমিনার স্পন্সর হিসেবে অবদান রেখেছে ২৪/৭ ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, এএসকে টেলিকম লিমিটেড, আয়েশা সার্ভিসেস (এএসএল বিপিও), ইগনাইট টেক সল্যুশনস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি এবং ইউনিকার্ট। এছাড়াও, টেকনোলোজি পার্টনার হিসেবে ছিল এডিএন টেলিকম লিমিটেড ও টেকনো; লাইফস্টাইল পার্টনার হিসেবে অ্যাডোনিস গ্রুপ; এবং নলেজ পার্টনার হিসেবে সিসি-এপিএসি, কোচ কাঞ্চন একাডেমি ও সিওপিওসি এই আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে