আইইবিতে স্পিনিং খাতের সংকট নিয়ে সেমিনার 

বিনা শুল্কে সুতা রফতানি করে দেশের স্পিনিং বাজার দখল করছে ভারত

২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:১৬  
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:০৪  
বিনা শুল্কে সুতা রফতানি করে দেশের স্পিনিং বাজার দখল করছে ভারত

বাংলাদেশের স্পিনিং খাত দীর্ঘদিন ধরেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। উচ্চ গ্যাসমূল্য, বিদেশি সুতার অনুপ্রবেশ ও নীতিগত অসামঞ্জস্য—এসব সমস্যা সমাধান না হলে এই শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

২৫ অক্টোবর, শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) সদর দফতরের কাউন্সিল হলে “স্পিনিং সেক্টরের বর্তমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। 

আইইবি’র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইবি’র ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী খান মনজুর মোরশেদ।

তিনি বলেন, “স্পিনিং সেক্টরের বড় সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় সুতা এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। মালিকেরা চান ভারতীয় সুতা দেশে প্রবেশ বন্ধ হোক, কিন্তু গার্মেন্টস মালিকেরা বিপরীত মত দেন। তাই এই দ্বন্দ্ব নিরসনে সব সেক্টরের প্রতিনিধি নিয়ে বসতে হবে।”

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরমাডা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “বিশ্বে শিল্পবিপ্লব ঘটেছে প্রযুক্তি ও নীতির সমন্বয়ে। অথচ বাংলাদেশে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। ভারত বিনা সুল্কে সুতা রফতানি করে আমাদের বাজার দখল করছে। উৎপাদন খরচের নিচে বিক্রি করে তারা ডাম্পিং করছে—এটি বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।”

ওয়ান কম্পোজিট লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী নাসিরুদ্দিন মিয়া বলেন, “আমরা এখন এক ডলার বিশ সেন্টে শার্ট বিক্রি করছি, কিন্তু উৎপাদন খরচই ১ ডলার ৫৫ সেন্ট। এই ব্যবধান টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সরকারকে দ্রুত নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ইনসেন্টিভ পুনরায় চালু করতে হবে।”

মাসকো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মাহবুব মিল্টন বলেন, “প্রতিযোগিতা থাকবেই। আমাদের খরচ কমাতে হবে, বিশেষ করে ইউটিলিটি ও পরিবহন খাতে। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতেই হবে।”

আকিজ গ্রুপের সাবেক নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী জামিল টিপু বলেন, “স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা স্পিনিং মিলগুলো অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় ধ্বংস হয়েছে। ভারতীয় ডাম্পিং নীতির কারণে আজও এই সেক্টর হুমকির মুখে। গ্যাসের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, এখনই বিকল্প শক্তি যেমন সৌরবিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে।”

বেঙ্গল এনএফকে লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, “ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি শিল্পকে আরও চাপের মধ্যে ফেলছে। বর্তমানে ১৩ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। সোলার ব্যবস্থায় ৪৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, তবে শিল্প চালুর আগেই লোন পেলে উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসবে।”

রাহ স্পিনিং মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আহসানুল রাসেল বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্থিরতা স্পিনিং সেক্টরের সবচেয়ে বড় বাধা। প্রডাকশন চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। সরকার যদি ইউটিলিটি সমস্যা সমাধান করে, খরচ অনেক কমে আসবে।”

লাবলু-বাবুল কম্পোজিট মিলসের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, “আমরা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করেছি, কিন্তু বিদেশি সুতা অবাধে বাজারে ঢুকে পড়ায় বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

মোশাররফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, “গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার আগে শিল্পখাতকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়নি। এখন ভারতীয় সুতা সস্তায় ঢুকে পড়ায় স্থানীয় মিলগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।”

সভায় আরও বক্তব্য দেন সালমা গ্রুপের সিইও প্রকৌশলী মো. আজহার আলী, আইটিইটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এহসানুল করিম কায়সারসহ অনেকেই।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জুলহাস উদ্দিন, বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. আইয়ুব নবী খান, আইইবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী শেখ আল আমিন ও প্রকৌশলী নিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া, সম্মানী সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ ওসমানী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী এটিএম সামসুদ্দিন খানসহ অন্যান্য বিশিষ্ট প্রকৌশলীরা।

সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. সাঈদুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকৌশলী সুমায়েল মো. মল্লিক।