ঢাবিতে ইয়ুথ কনফারেন্সে প্রফেসর ড. ওমর হাসান কাসুলি

আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের আলোয় পরিচালিত প্রযুক্তিই টেকসই মানব সভ্যতার ভিত্তি

১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:০৭  
আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের আলোয় পরিচালিত প্রযুক্তিই টেকসই মানব সভ্যতার ভিত্তি

এথিক্যাল চ্যালেঞ্জেস অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) শীর্ষক ইয়ুথ কনফারেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের প্রফেসর মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (আইআইআইটি) ১৮ অক্টোবর শনিবার, এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সৌদি আরবের কিং ফাহাদ মেডিকেল সিটি- এর অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইআইআইটি'র সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ড. ওমর হাসান কাসুলি।

প্রফেসর কাসুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক চ্যালেঞ্জ, এর সামাজিক প্রভাব এবং ইসলামী নীতিবোধের আলোকে প্রযুক্তির মানবিক ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, “এআই'কে নৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে নৈতিকতা ও মানবিকতার প্রশ্ন নতুনভাবে সামনে নিয়ে আসছে, তা দক্ষতার সাথে সচেতনভাবে ডিল করতে হবে। চিকিৎসাবিদ্যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার মানব নিয়ন্ত্রণ হারানোর নৈতিক সংকটের ঝুঁকি তৈরি করছে। 

ইসলামিক নৈতিকতা, আইন ও প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বলেন, মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মহাবিশ্বের সেরা সত্তা হিসেবেযার পাঁচটি গুণ বা সক্ষমতা তাকে অন্য সব সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে: ইস্তিখলাফ (খিলাফত), হামলুল আমানাহ (দায়িত্ব), তাসখির (নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা), ইস্তিমার (সভ্যতা নির্মাণ), এবং আখলাক (নৈতিকতা)। এই পাঁচটি গুণের সমন্বয়ে মানুষ প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছে এবং সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নৈতিক দায়িত্ব তার নিজের। আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন কেবল সহায়ক নয়- এটি নিজে শিখতে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং এমনকি রোগনির্ণয়ে নতুন সমাধান তৈরি করতে সক্ষম। এতে প্রশ্ন উঠছে- মানুষ কি এখনও নিয়ন্ত্রক, নাকি যন্ত্রই এখন নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে? এই নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য ক্ষতি মানব নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বকেই বিপন্ন করতে পারে।

ড. কাসুলি নৈতিক দায়বদ্ধতার জটিল প্রশ্ন উত্থাপন করেন: যদি এআই চিকিৎসায় ভুল করে রোগীর ক্ষতি করে, তবে দায়ী কে- প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার বিক্রেতা, হাসপাতাল মালিক নাকি চিকিৎসক? এই প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ নয়, বরং ফিকহ (ইসলামী আইন) ও নৈতিক চিন্তনের সমন্বিত কাঠামোর মধ্য দিয়ে খুঁজতে হবে। ইসলামি দৃষ্টিকোণে মানুষ কখনো তার নৈতিক ক্ষমতা ও বিচারবোধ মেশিনের কাছে হস্তান্তর করতে পারে না।  এআই কেবল “তাসখির”-এর একটি মাধ্যম, নিয়ন্ত্রণের নয়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, অন্ধ প্রযুক্তি-প্রতিযোগিতা ও মুনাফাকেন্দ্রিক উদ্ভাবন মানবতার ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে- বাস্তব পরিণতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কল্যাণ ও ক্ষতির দিক বিচারে সুবিবেচিত ভারসাম্য  বজায় রাখতে হবে।ক্ষতি প্রতিরোধ কল্যাণ অর্জনের চেয়ে অগ্রগণ্য- এই ফিকহি নীতি অনুসরণ করতে হবে। মানুষের নৈতিক দায়িত্ববোধ ও আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের আলোয় পরিচালিত প্রযুক্তিই হবে টেকসই মানব সভ্যতার ভিত্তি।”

অনুষ্ঠানে বিআইআইটি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার তরুণ ও পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করেন।