পদ্মা সেতুতে নন-স্টপ টোল কালেকশন উন্মুক্ত

পদ্মাসেতু পাড়ে মোটর সাইকেল ছাড়া অন্য সব যানবাহনই এখন থেকে সেতুর টোল প্লাজায় না থেমেই পরিশোধ করতে পারছে টোল। এজন্য সেতুর দুই প্রান্তে দুইটি করে মোট ৪টি লেনে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
এখান থেকেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক গাড়ির উইন্ডশিল্ডে সংযুক্ত স্টিকার (ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত) একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ ব্যবহার করে যানবাহনগুলো থেকেই সেতুতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইটিসি পদ্ধতিতে টোল আদায় করা শুরু হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার বিকেল থেকে।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই সেবা চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ ইশতিয়াক আহমেদ বলেছেন, পরীক্ষায় কিছু মাইনর এরর আসছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে এগুলো ফিক্সড হয়ে যাবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে এটি পুরোপুরি লাইভে চলে যাবে।
এই পদ্ধতিতে টোল পরিশোধ সুবিধা পেতে হলে ইটিসি সিস্টেমে আগ্রহী ব্যবহারকারীদের প্রথমে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের টেপ অ্যাপে গিয়ে ‘ডি-টোল’ অপশনে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ও রিচার্জ সম্পন্ন করতে হয়। এরপর পদ্মা সেতুর ‘আরএফআইডি’ বুথে শুধু প্রথমবারের মতো ‘আরএফআইডি’ ট্যাগ চেক ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করতে হয়। প্রক্রিয়া শেষ হলে গাড়ি ব্যবহারকারীরা ন্যূনতম ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ইটিসি লেন ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে নির্ধারিত টোল কেটে নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে টেপের পাশাপাশি অন্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপও এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। টেপসহ বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই।
সূত্রমতে, নতুন করে সেতু কর্তৃপক্ষ ইউনিভার্সাল প্রসেসে বা সর্বজনীন ব্যবস্থার সুবিধা রেখে যে কোনো অ্যাপের মাধ্যমে ইটিসি পদ্ধতিতে ডিজিটাল পে সিস্টেম চালুর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম অ্যাপের সহযোগিতায় ইটিসি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে অ্যাপের সাথে যুক্ত হওয়া মোবাইলফোন ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়সহ বা অন্য যে কোনো ব্যাংকের ডিজিটাল মানি ট্রানজেকশন ব্যবহার করে যানবাহনের চালকরা সেতুর টোল দিতে পারবেন। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল রাজধানীর সেতু ভবনে সেতু বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তিনটি ব্যাংক ও মোবাইলফোন ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেছিলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহাসড়কে টোল আদায়ে স্বস্তি, সময় সাশ্রয় ও সেবা সহজীকরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আলোকে এ ইটিসি সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি শুধু পদ্মা সেতু নয়, যমুনা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্য সেতুতেও আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর টোল আদায়ের পথে এক বড় মাইলফলক।’
এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, সেতু বিভাগ, বিআরটিএ এবং ডিটিসিএ মিলে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কাজে হাত দিয়েছি। আস্তেধীরে ফলাফল আসা শুরু হবে। এটা আমাদের যৌথ টিমের টেস্ট রান। দ্রুতই দেশের সবগুলা টোল গেটে আমরা নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন লঞ্চ করবো বলে আশা রাখি।