মোবাইল ওয়ালেট, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আন্তঃলেনদেন চালু হচ্ছে

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৯:৪৭  
মোবাইল ওয়ালেট, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আন্তঃলেনদেন চালু হচ্ছে

নগদ টাকার ব্যবহার কমাতে ডিজিটাল লেনদেনে জোর দেওয়া হয়েছে; নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তারপরও প্রতি বছর ১০ শতাংশ করে নগদ টাকার লেনদেন বাড়ছে। এ জন্য বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা খচর হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এজন্য শিগগির দেশে চালু হতে যাচ্ছে ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম (আইআইপিএস)। এর মাধ্যমে মোবাইল ওয়ালেট, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একক নেটওয়ার্কে যুক্ত করে দ্রুত, সহজ ও সাশ্রয়ী ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

১৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে গভর্নরের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও গেটস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনায় এ কথা জানান বাংলাদেশ বংকের গভর্নর।

গভর্নর বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনো প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। এ জন্য শুধু কভারেজই নয়, বরং জনগণের গভীরভাবে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়াই প্রকৃত অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড।

তিনি বলেন, মাইক্রোক্রেডিট খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর করে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার এজেন্ট কাজ করছেন এবং সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তবে ঋণ বিতরণে আরও উদ্যোগী হতে হবে।

গভর্নর আরও জানান, ডিজিটাল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একটি সমন্বিত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনা চলছে। পূর্বের ব্যর্থ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে এবার গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরীক্ষিত মডেল মোজোলুপ ব্যবহার করে এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

নারীদের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এখন থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ এজেন্ট নারী হতে হবে। নারীরা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে গৃহিণী, কন্যা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে পারবেন। 

আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, ডিজিটাল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একটি সমন্বিত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনা চলছে। আগের ব্যর্থ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে এবার গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরীক্ষিত মডেল ‘মোজালুপ’ ব্যবহার করে এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বর্তমানে দেশে ২০ কোটির বেশি নিবন্ধিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট থাকলেও প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক এখনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে। গ্রামীণ-শহর বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক ব্যবধান ও বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীর মধ্যে সীমিত আন্তসংযোগ এ খাতের বড় চ্যালেঞ্জ।

আলোচনায় তানজানিয়ার টিআইপিএস, পাকিস্তানের আরএএএসটি ও রুয়ান্ডার এনডিপিএস ২.০ উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, এসব দেশে আন্তসংযোগযোগ্য পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হওয়ায় খরচ কমেছে, দক্ষতা বেড়েছে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এ ছাড়া গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় তৈরি ওপেন-সোর্স প্ল্যাটফর্ম মোজালুপ নিয়েও আলোচনা হয়, যা প্রতারণা প্রতিরোধ, পরিচয় যাচাই ও সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সহজে বাস্তবায়নে সহায়তা করে।

আলোচনায় চারটি অগ্রাধিকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা বিষয় হলো—বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া, বাংলাদেশের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্মে ঐকমত্য গড়া, ন্যায্য প্রতিযোগিতার জন্য নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা ও আইআইপিএস বাস্তবায়নের রোডম্যাপ প্রণয়ন।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রসঙ্গে তিনি জানান, ন্যানো লোনের সীমা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে এবং তা আরও বাড়ানো হবে। তবে নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে মোবাইল ওয়ালেটে আসা টাকা যেন আবার নগদে উত্তোলিত না হয়, সে জন্য সারা দেশে ব্যবসায়ীদের বাংলা কিউআর কোড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, দেশে শিগগিরই ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম (আইআইপিএস) চালু করা হবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ওয়ালেট, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একই নেটওয়ার্কে যুক্ত কর হবে। সহজ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করা এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, ব্যাংকার, ফিনটেক উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন।