ল্যান্ডিং-পার্কিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কমানোর সুপারিশ
ভারতের ট্রানজিট সুবিধা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশের এয়ার কার্গো খাতকে গতিশীল করতে বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং, পার্কিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কমানোর সুপারিশ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
ভারতের ট্রানজিট বন্ধের প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে আরও প্রতিযোগিতামূলক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সোমবার (১৯ মে) এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে যারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে থাকে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে।এ বিষয়ে বাণিজ্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা কার্গো ব্যয় কমাতে বদ্ধপরিকর এবং ভারতের চেয়েও আমাদের সেবা আরও প্রতিযোগিতামূলক করবো।
একমত পোষণ করে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, কার্গো হ্যান্ডলিং খরচ কমাতে বিদ্যমান ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই নতুন হারে চার্জ ঘোষণা করা হবে।
কার্গো অবকাঠামোতে বাড়ছে বিনিয়োগ
বর্তমানে শাহজালালের কার্গো ভিলেজ দৈনিক ৩০০ টন হ্যান্ডলিং সক্ষমতার জন্য পরিকল্পিত হলেও বাস্তবে সেখানে প্রায় ১,২০০ টন পর্যন্ত কার্গো পরিচালনা করা হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত জনবল নিয়োগসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।
সম্প্রতি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গ কার্গো অপারেশন চালু হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও একই কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। শুল্ক খালাস প্রক্রিয়াও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো একসঙ্গে কাজ করছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বর্তমান ২ লাখ টন থেকে বেড়ে বছরে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত হবে। এই টার্মিনালে আধুনিক অটোমেশন প্রযুক্তিসহ ৩৬ হাজার বর্গমিটারের একটি কার্গো জোন থাকবে, যাতে স্টোরেজ সংকট কাটবে।
চার্জ ও ব্যয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ
বর্তমানে ঢাকায় প্রতি কেজি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে চার্জ পড়ে প্রায় ০ দশমিক ২৯ ডলার, যা ভারতের দিল্লির ০ দশমিক ০৫ ডলারের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। পাশাপাশি জেট ফুয়েলের দামও ভারতে তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই ব্যয়ের চাপ রপ্তানিকারকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) তথ্য মতে, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬০০ টন গার্মেন্টস পণ্য ভারতের মাধ্যমে রপ্তানি হতো, যা এখন পুরোপুরি বন্ধ। তবে জেট ফুয়েলের সাম্প্রতিক মূল্য হ্রাস কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে রপ্তানিকারকদের।
এমন অবস্থায় অভ্যন্তরীণ এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভারতের ট্রানজিট বন্ধের ঘটনাকে সংকট হিসেবে নয়, বরং একটি সম্ভাবনা হিসেবে দেখতে হবে। এটি বাংলাদেশের জন্য নিজস্ব এয়ার কার্গো হাব গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ বলেও মনে করছেন তারা৷







