৫ আগস্ট রাত আড়াইটা পর্যন্ত সংসদে লুকিয়ে ছিলেন পলক!

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট সকাল থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ভবনের একটা কক্ষে সতীর্থদের সঙ্গে পালিয়ে ছিলেন তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ আরো ১১জন তার সঙ্গে ছিলেন।পরে সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।
বুধবার(২৩ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালতে শুনানি চলাকালে এমনটাই জানিয়েছেন পলক।
শুনানি চলাকালে পলক আদালতের কাছে এক মিনিট সময় চান। এরপর তিনি আদালতকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার ঘটনার যে তারিখ ও সময়ের কথা শুনতে পেলাম তার বিষয়ে বলছি। ৫ অগাস্টে সন্ধ্যা বা রাতে মহান জাতীয় সংসদে রাত আড়াইটা পর্যন্ত স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, আমিসহ ১২ জন আবদ্ধ ছিলাম। সেদিন সংসদ ভবন আক্রান্ত হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ন্যায়বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ৮৬ দিন রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হোক।
এ সময় ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, যে পাঁচজন আন্দোলন দমাতে বক্তব্য রাখতেন তাদের একজন পলক। নেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না বললে হাস্যকর মনে হবে। যিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং যিনি সহযোগিতা করেছেন সবাই সমান অপরাধী।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে পলকের আবেদন নাকচ করে শুনানি শেষে ভাটারা থানার হত্যা মামলায় পলকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল কারাগার থেকে দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন সাবেক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আগামী শীত পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হলে সোয়েটার জোগাড় করতে হবে বলেও জানান তিনি। মক্কেলের সোয়েটার হারানোর কথা গণমাধ্যমকে জানান পলকে আইনজীবীও। তবে তার এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেছেন, কারাগার থেকে জুনাইদ আহ্মেদ পলকের সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য জানার পর তিনি তার কর্মকর্তাদের বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, পলকের সোয়েটারসহ শীতের কাপড় কারাগারের স্টোররুমে জমা আছে। সম্প্রতি পলকের স্ত্রী কারাগারে এসেছিলেন। তখন পলক শীতের কাপড় তার স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য কারাগারের নিরাপত্তারক্ষীর কাছে দিয়েছিলেন। কিন্তু অসাবধানতাবশত কারারক্ষীরা তা ভুলে গিয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, সেদিন বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ গ্রহণ শেষ হলে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ওই ব্যাগের মালিকানা না পাওয়ায় আবার সেটি কারাগারের স্টোররুমে রাখা হয়।
আদালতে সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলার পর কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছিলেন, আলোচনায় থাকার জন্য জুনাইদ আহ্মেদ পলক উদ্ভট সব দাবি করে থাকেন। এই সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য, এমন একটি উদ্ভট দাবি। কারাগার থেকে কোনো বন্দীর জিনিসপত্র হারানোর সুযোগ নেই।
গত বছরের ১৪ আগস্ট খিলক্ষেত নিকুঞ্জ এলাকা থেকেগণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে বিভিন্ন সময় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ছয়টি মামলায় তার মোট ৫৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।