‘জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করিনি বলেই কি সরকার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না’
দাবি আদায়ে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা
উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩২ জন ছাত্র। বাকি শিক্ষার্থীরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের চারদিকে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে অভুক্ত অবস্থায় অবস্থান করেন তারা। ২০ ঘণ্টা পূর্ণ হলেও কোনো সাড়া মেলেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। দাবি আদায়ে উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা।
কেননা, রাতে অসুস্থ হওয়ায় এক শিক্ষার্থী এবং অসুস্থতার আশঙ্কায় অন্য এক শিক্ষার্থীকে অনশন থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন তার অভিভাবক। তারপরও অনশনরত শিক্ষার্থী রাহাত, তৌফিক, গালিব ও ওবায়দুল্লাহ জানান, উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা। প্রয়োজনে জীবন দেবেন। এদের মধ্যে একজন জানান, অনশনের ২০ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। অনেকের ডিহাইড্রেশন শুরু হয়ে গেছে। অতিরিক্ত গরমে সবাই অসুস্থ হওয়ার পথে।
আরন্দালনরতদের প্রশ্ন, ‘আমরা রাস্তা,ট্রেন অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করিনি বলেই কি আমাদের একটা যৌক্তিক দাবির দিকে দৃষ্টিপাত করছে না অন্তর্বর্তী সরকার?’
তাদের দাবি, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা হামলা করলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন। হামলার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
তারা বলেন, অন্যদিকে কিছুদিন আগে বহিরাগত একজন বাদী হয়ে ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কুয়েট কর্তৃপক্ষ ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও রয়েছে। উপাচার্যের কাছে বারবার দাবি জানালেও তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেননি।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তারপর দুই রাত খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন তারা। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের দাবি পূরণের উদ্যোগ নেয়নি। তাই তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনে বাধ্য হয়েছেন।
এর আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় এ কর্মসূচি শুরু করেন অনশনরতরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, তারা শিক্ষার্থীদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছেন। আবারও শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার ব্যাপারে কথা বলবেন তিনি।
তারও আগে ১৪ এপ্রিল (সোমবার) রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে এবং আবাসিক হলগুলো ২ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই দিন ধরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দুপুরে নিজেরাই একের পর এক হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল (রোববার) বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।