এডিএন টেলিকমের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

২১ এপ্রিল, ২০২৫  
২১ এপ্রিল, ২০২৫  
এডিএন টেলিকমের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এডিএন টেলিকম লিমিটেডের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক নিলয় কর্মকার এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ-ব্যবস্থাপক উৎপল চন্দ্র দেবনাথ। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার এবং হাই-টেক পার্কে জমি উন্নয়ন ও বিনিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এই কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এডিএন টেলিকম লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এই সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৩১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩১.৩৫ টাকা। 

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে,  তদন্তের বিষয়টি এডিএন টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এডিএন টেলিকম লিমিটেডের আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার এবং হাই-টেক পার্কে জমি উন্নয়নে বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। 

তদন্তে প্রোসপেক্টাসে বর্ণিত খাতগুলোতে কোম্পানিটি আইপিওর অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেছি কি না, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। এছাড়াও বিভিন্ন হাই-টেক পার্কে কোম্পানিটি জমি লিজ নেওয়াসহ অন্যান্য বিনিয়োগ সঠিকভাবে করেছে কি না, তদন্ত কমিটি তাও যাচােই করে দেখবে। 

সত্রমতে, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

জানাগেছে, পুঁজিবাজার থেকে ৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এ লক্ষ্যে বুক বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার ৩০ টাকা দরে বিক্রয় করে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে এডিএন টেলিকম। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬টি শেয়ার ২৭ টাকা দরে বিক্রয় করে ২১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮২ টাকা সংগ্রহ করা হয়। তবে আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ভৌত কাঠামোর উন্নয়ন, ডাটা সেন্টার স্থাপন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করেছে।

সূত্রমতে, ২০২৪ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সিলেটে নতুন কারখানা তৈরি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল এডিএন টেলিকম। সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে (বিএসএমএইচটিপি) প্রায় ১ দশমিক ৭৫ একর বা ৭ হাজার ৯৫ বর্গমিটার জমি বরাদ্দ পায় কোম্পানিটি। এরই ধরাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল জমির ইজারা চুক্তি সম্পন্ন হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে এডিএন টেলিকম।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এডিএন টেলিকম লিমিটেড। ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৬৪ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ৪৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৬টি। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪২.৮১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.৫৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৯৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১.৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।