কেন্দ্রীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠনের আগ পর্যন্ত এনআইডি ইসি’র কাছেই থাকবে : প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি

নির্বাচন কমিশন থেকে ডাটা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বুধবার রাজধানীর আগারাগঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের পঞ্চম তলার সম্মেলন কক্ষে বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তার মতে, বৈশ্বিকমানে নাগরিকের উপাত্ত বিকেন্দ্রীকরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার অধীনে আনা হবে।
আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে এনআইডির ওনারশিপ নিয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কীভাবে জাতীয় পরিচয়ের তথ্য সংরক্ষণ করা হয় তা তুলে ধরেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, আপাতত ৫টি মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেজের মধ্যে আন্ত সমন্বয়ে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ। তবে ডেটা অর্থনীতি বিকাশের জন্য আইসিটি বিভাগের অধীনে না রেখে এর সংখ্যার চেয়ে এর মান উন্নয়নে বিশেষ মনযোগী হয়ে সার্বভৌম উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং এআই ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারে নাগরিক ও রাষ্ট্রের তথ্যের সুরক্ষায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কবে নাগাদ এই ডেটা অথরিটি গঠন হতে পারে এবং এর ধরন কী হবে জানতে চাইলে ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমরা এখন চিন্তা ও পরিকল্পনা করছি। এটার সাংবিধানিক ক্ষমতা লাগবে এবং এটা একটা রেগুলেটরি অথরিটি হবে। এটা সরাসরি কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে না। আমরা যখন পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট করতে যাব, তখন আগে এই ডেটা অথরিটির প্রশ্নটি সলভ করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, কার্পেটের নিচে সমস্যা না লুকিয়ে সমাধানের জন্য আমরা একটার পর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ তৈরি না করে একটা ন্যাশনাল ডেটা অথরিটি গঠন করতে যাচ্ছি। তথ্য মহাসড়ক বা সমুদ্রে একটি আন্তঃক্রিয়াশীলতা তৈরিতে কাজ করছি। বিশ্বের ৯৩টি দেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডেটাবেস ব্যবস্থাপনা করেন। সেই বিবেচনায় যেহেতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা সব তথ্য তাদের কাজে লাগে না। তাই আমরা আপাতত যার যার কাছে যে তথ্য আছে তা তাদের কাছেই থাকবে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অধীনে নেয়া হবে। বৈশ্বিক মানের করতে কাজ করবে। এতে কেউ চাকরি হারাবে না। বরং আরো নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে।
ফয়েজ জানান, ২০০৭ সালে বাংলাদেম সেনাবিহিনীর প্রত্যক্ষ ও কারিগরি সহায়তায় নির্বাচন কমিশন এনআইডি প্রস্তুত করে। এখন এই ডেটাবেজে ৩৫ ধরনের তথ্য রয়েছে। এর বাইরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করে বিডিআরএস। আর বাইরে বিয়ে-তালাক ইত্যাদির জন্য রয়েছে সিআরভিএস। এখন এই তথ্য ডার্কওয়েবে ফাঁস হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এটা হয়। এটি সামাল দিতে ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ দেশে দেশে বিভিন্ন মডেল রয়েছে। এর মধ্যে সাইলোগুলোকে আন্তঃসংযুক্ত করে। আমরাও সেভাবে আমরাও এ ধরনের একটি মেডল নিয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু দেশে এখনো কোনো ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন না থাকায় রূপান্তরের পথ রেখা তৈরি করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ডিজিটাল ভিত তৈরিতে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসের শেষ নাগাদ উদার মনোভাবে তৈরি এই আইনের একটি খসড়া প্রকাশ করা হবে। একইসঙ্গে সাইলোগুলোর মথ্যে আন্তঃক্রিয়াশীলনতা এবং জাতীয় সম্পদ হিসেবে একটি স্বতন্ত্র্য ডেটা অথিরিটি গঠন করা হচ্ছে।
ডেটার মালিকানা হারালেও কারো চাকরি যাবে না– সেই আশ্বাস দিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমি এটার নিশ্চয়তা দিতে চাই ডেটা অথরিটি গঠনের পর বাংলাদেশের যত মন্ত্রণালয় বা সংস্থা আছে, তাদের কারোরই আইটি সংশ্লিষ্ট কর্মীদের চাকরি যাবে না। কারোর অথরিটি ক্ষুণ্ন হবে না। বরং এর মাধ্যমে প্রত্যেকটা ব্যবস্থা আরও বেশি শক্তিশালী হবে। অন্য মন্ত্রণালয়ের ডেটা প্রাপ্তির তাদের যে অধিকার, সেটার সুরক্ষা এখানে দেওয়া হবে।”
ফয়েজ আহমদ বলছেন, বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের ডেটা ডার্ক ওয়েবে বেচাকেনা হচ্ছে। চাইলেই পাওয়া যায় ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ডেটার সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য একটি ‘ডেটা অথরিটি’ করার পরিকল্পনা চলছে।
“এই ডেটা অথরিটি সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ডেটা স্ট্রাকচারগুলোকে সংযুক্ত করে একটা অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবে। এখন নির্বাচন কমিশন অনেকগুলো সংস্থাকে ডেটা সরবরাহ করছে। কিন্তু কোনখান থেকে ডেটা চুরি হচ্ছে কী না তা তদারকির সক্ষমতা তাদের নেই। জাতীয় ডেটা অথরিটির ইঞ্জিনিয়াররা সার্বক্ষণিক ডেটার সুরক্ষার বিষয়ে কাজ করবেন”- যোগ করেন তিনি।
ডেটা সুরক্ষার যথাযথ কাঠামো না থাকায় দেশে অনেক ধরনের আর্থিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না মন্তব্য করে ফয়েজ আহমদ বলেন, “এখন মানুষ ব্যাংকে একরকম করে আবার হাসপাতালে আরেকরকম ঠিকানা দিচ্ছেন। একটা লোক ১৭ জায়গায় তথ্য দিলে ১৭ রকম তথ্য পাওয়া যায়।
ফয়েজ আরো বলেন, “এখন ঠিকানা যাচাই (অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশন) ছাড়া দেশে পেপালের মত ফিনান্সিয়াল সার্ভিসগুলোও আসতে চায় না। সেজন্যই আমাদের একটা সমন্বিত ডেটা হাইওয়েতে উঠতে হবে, যেখানে এই অথরিটি শৃঙ্খলা রাখবে। যার যতোটুকু ডেটা লাগবে তার ওনারশিপে ততোটুকু ডেটা থাকবে।”