ডাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইকবাল

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  
ডাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইকবাল

জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। প্রধান তিন পদের বাইরে এগিয়ে থাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন ইকবাল হায়দার।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইবাল। ৪ হাজার ২৭৩ ভোট পেয়ে এই পদে দ্বিতীয় হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আহাদ বিন ইসলাম শোয়েব। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের মমিনুল ইসলাম ৩ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।

ফলিত বিজ্ঞান ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল হায়দার দিনাজপুরের সন্তান। তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি ছিলো ক্যাম্পাসে হাইস্পিড ওয়াইফাই ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ল্যাব নিশ্চিত করা।   

একইভাবে ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন শিবিরের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক। এই পদে  ৪ হাজার ১২৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। আর ৩ হাজার ৬১৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় ছাত্রদলের মোহাম্মদ আরকানুল ইসলাম। 

আর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন সানজিদা আহমেদ তন্বি। তার প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৭৭৮। ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড সাইকোলিজিক্যাল বিভাগের এই ছাত্রী রোকেয়া হলের আবাসিক। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে শিবিরের প্রার্থীর। শিবিরের প্রার্থী মো. সাজ্জাদ হোসাইন খান ৭ হাজার ১৮৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।

আলোচিত কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৯২০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন শিবিরের প্যানেলের উম্মে সালমা। ৪ হাজার ৪৮২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সুর্মী চাকমা। তৃতীয় হয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থী চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, তাঁর ভোট ২ হাজার ৭০২।

ভিপি পদে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে এসএম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মুহা. মহিউদ্দীন খান জয় পেয়েছেন বিপুল ভোটে। প্রতিদ্ব্ন্দ্বী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তারা।

ফলাফল ঘোষণার পর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নব-নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে জয় অথবা পরাজয়ের কিছু নেই। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাই প্রজন্মের বিজয় হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙক্ষার বিজয় হয়েছে, শহীদদের বিজয় হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ডাকসুর ভিপি হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। আমি কাম্পাসের বোনদের একজন ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাই, আমি ক্যাম্পাসের ছোট ভাইদের একজন ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাই, বড় ভাইদের স্নেহের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। একজন বন্ধুর বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। শিক্ষকদের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে চাই।’

ডাকসুর নব-নির্বাচিত ভিপি বলেন, ‘আবাসন, গবেষণাসহ সব বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্নের ক্যাম্পাস না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ লড়াই চলবে।’

৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের পর ছয় পৃষ্ঠার ওএমআর শিটের ব্যালট পেপার ১৪টি মেশিনে ব্যালট গোনা হয়। এগুলোর কোনোটির স্ক্যানিং স্পিড- ঘণ্টায় পাঁচ হাজার, কোনোটির আট হাজার পাতা। মেশিনে গণনার সঙ্গে মিল আছে কি না, তা পরখ করে দেখেন উপস্থিত সাংবাদিক ও প্রার্থীদের এজেন্টরা। এরপর পুরোদমে ভোট গণনা চলে। এভাবে ভোটগণণা শেষে ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ফল ঘোষণা শুরু করেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন।