কুয়েট ‘ইউরেকা’র প্রথম আসরে সেরা জান্নাত ও আবির

খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েটের সবচেয়ে বড় গবেষণা উৎসব ‘ইউরেকা (সিজন–১)’ এ স্নাতক থিসিস অব দ্য ইয়ার পুরস্কার অর্জন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবির রহমান এবং স্নাতকোত্তর থিসিস অব দ্য ইয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (BME) বিভাগের এমএসসি শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস।
এদের মধ্যে আবির রহমান প্রশ্ন না দেখেই কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে উত্তর দেয়া নিয়ে (AI Answers-without seeing your question) গবেষণা করছেন। গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে হোমোমরফিক এনক্রিপশন সিস্টেমে স্পর্শকাতর উপাত্ত না দেখেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রম্পেটর জবাব দেয়া হয়। গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে, হোমোমর্ফিক এনক্রিপশন ও সিকিউর অ্যাগ্রিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় ভাষা মডেলের জন্য একটি উন্নত ও নিরাপদ ফেডারেটেড লার্নিং ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব, যা ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনতা আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে সক্ষম। এই গবেষণায় তার সহযোগিতা করেছেন কুয়েটের অধ্যাপক ড. কাজী মু. রকিবুল আলম।
অপর বিজয়ী পিএইচডি গবেষক জান্নাতুল ফেরদৌসের গবেষণা শিরোনাম ছিলো মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগ ও ওষুধের কার্যপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণের জন্য রক্তপ্রবাহের গতিবিদ্যা (হিমোডাইনামিক্স) মডেলিং (Modeling Hemodynamics for Cerebrovascular Diseases and Drug Behavior)। এই গবেষণায় মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলের ধরন বা চাপের পরিবর্তন কীভাবে স্ট্রোক বা অন্যান্য সেরিব্রোভাসকুলার রোগে প্রভাব ফেলে, এবং ওষুধ সেই প্রবাহে কীভাবে কাজ করে— তা গণনামূলকভাবে বা সিমুলেশনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। অর্থাৎ এটি রক্তপ্রবাহ, রোগ ও ওষুধের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণা প্রতিযোগিতা ইউরেকার এই অভিষেক প্রতিযোগিতায় টেকনিক্যাল রাইটিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ইলেকট্রিনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী উদিতা রহমান অর্শি। এই বিভাগে রানার্স আপ হয়েছেন টিম কোয়ান্টাম স্পার্ক দলের দুই সদস্য তড়িৎ ও বিদ্যুত প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ধ্রুব জ্যোতি দাস ও মোঃ সামিউল ইসলাম। দ্বিতীয় রানার্সআপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসট্রাকশন বিভাগের সৈয়দ রিয়াজ মাহমুদ।
এছাড়াও তিন মিনিটের গবেষণা উপাস্থাপনায় সিভিল ও ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ থেকে গবেষণায় উইনার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন আর্কিটেক্ট বিভাগের ফারদিন ইসলাম এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অনুষদের নুসরাত জাহান নাবিলা।
গবেষণাকে শিল্প ও বাস্তব জীবনের প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে ১৮ অক্টোবর, শনিবার কুয়েট রিসার্চ সোসাইটির (KRS) আয়োজনে অ্যাকাডেমিক অ্যাচিভমেন্ট অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (AASDC)–এর অধীনে অনুষ্ঠিত গবেষণা উৎসবের প্রথম আসরে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, “উদ্ভাবন তখনই বাস্তব রূপ পায়, যখন গবেষণার ফল বাস্তব জীবনের সমস্যার সঙ্গে সংযুক্ত হয়। শিল্প–একাডেমিয়া সহযোগিতা হলো সেই সেতুবন্ধন যা তত্ত্বকে বাস্তবে রূপ দেয়।”
কুয়েট রিসার্চ সোসাইটির উপদেষ্টা প্রফেসর ড. কাজী হামিদুল বারী বলেন, “ইউরেকা সিজন–১ কুয়েটের গবেষণা সংস্কৃতিতে এক নতুন অধ্যায়। এটি দেখিয়েছে কীভাবে একাডেমিক গবেষণা জাতীয় শিল্পখাতের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
আয়োজনে অ্যাকাডেমিক অ্যাচিভমেন্ট অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু প্রকৌশলী নয়, উদ্ভাবক হিসেবে চিন্তা করতে শেখে। ইউরেকা সেই পথেরই অংশ।”
কুয়েট রিসার্চ সোসাইটির সভাপতি নাফিস আহমেদ পান্থ বলেন, “এই প্রতিযোগিতা শুরু করার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে বাস্তব জীবনের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করা। গবেষণাকে বাস্তব সমস্যার/চাহিদার সঙ্গে যুক্ত করতে পারলেই আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।” ‘ইউরেকা (সিজন–১)’ গবেষণা ও শিল্প–একাডেমিয়া সহযোগিতার এক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও প্রযুক্তিগত গবেষণার মানোন্নয়নের নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
আয়োজক সূত্রে প্রকাশ, ৪০০ এরও বেশি অংশগ্রহণকারী এবং ৫০ এরও বেশি শিল্প ও একাডেমিক বিশেষজ্ঞ এই গবেষণা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। সিম্পোজিয়ামের মূল আকর্ষণ ছিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত থ্রি মিনিট থিসিস (3MT®) প্রতিযোগিতা, যা বিশ্বের ৮৫টিরও বেশি দেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিযোগীরা তাদের পুরো গবেষণার সারমর্ম মাত্র তিন মিনিটে উপস্থাপন করেন।