অ্যাপে শিশুরোগ শনাক্ত, চিকিৎসা ও ফলোআপ

২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:০১  
অ্যাপে শিশুরোগ শনাক্ত, চিকিৎসা ও ফলোআপ

এবার দেশের শিশুদের রোগ ব্যবস্থাপনায় নির্ভুলতা, সময় ও খরচ কমাতে তৈরি হলো ‘আইএমসিআই অ্যাপ’। অ্যাপটি স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ যৌথভাবে তৈরি করেছে।

এটি দেশের জাতীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: ডিএইচআইএস-২, ওপেন এসআরপি, ওপেনএমআরসি-এর সঙ্গে সংযুক্ত। 

বরিশাল জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত এই অ্যাপটি মাঠপর্যায়ে শিশুরোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও রেফারেল প্রক্রিয়া দ্রুত ও নির্ভুল করেছে বলে জানিয়েছে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বরতরা। 

রাজধানীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনফারেন্স রুমে ২৭ অক্টোবর, সোমবার অনুষ্ঠিত এক ন্যাশনাল ডিজেমিনেশন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ যৌথভাবে গবেষণার অভিজ্ঞতা ও ফলাফল উপস্থাপন করে।

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, ডিজিটাল হেলথ বিশেষজ্ঞ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা অ্যাপের কার্যকারিতা, মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও সারাদেশে এর সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, পাইলট পর্যায়ে বরিশাল জেলায় অ্যাপটির ব্যবহার শিশুসেবায় ডিজিটাল পরিবর্তনের সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অ্যাপের নির্দেশনা অনুসরণ করায় রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা পরিকল্পনায় ভুল উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সংগৃহীত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে সিস্টেমে জমা পড়ায় হাতে লেখা প্রতিবেদনের ঝামেলা দূর হয়েছে। একইসঙ্গে ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ড্যাশবোর্ডভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়েছে এবং হাতেকলমে কাজ কমায় সময় ও খরচ উভয়ই সাশ্রয় হয়েছে, সেবার মান বেড়েছে। এ ছাড়া দুর্গম এলাকার শিশুর ফলোআপ ও স্বাস্থ্যফল পর্যবেক্ষণ সহজ হওয়ায় জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের গবেষণা দল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শফিউন এন শিমুল অ্যাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, আইএমসিআই অ্যাপ রোগীর তথ্য ট্র্যাকিং, মনিটরিং ও জবাবদিহিতা বাড়ায়, বিশেষত গ্রাম ও দুর্গম এলাকায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতি বছরই অনেক শিশু এমন সব কারণে মারা যায়, যা প্রতিরোধযোগ্য। এই অ্যাপের মাধ্যমে সময়মতো রোগ শনাক্ত, সঠিক চিকিৎসা, নির্ণয়, রেফারেল এবং ওষুধ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি সারাদেশে বাস্তবায়িত হলে দেশের সব শিশু এর সুফল পাবে।

সেভ দ্য চিলড্রেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই ধরনের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই শিশু। আমাদের ২০৩০ সালের লক্ষ্য হলো সবার জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য অর্জনে তৃণমূল পর্যায়ে সেবার সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। আইএমসিআই অ্যাপটি সারাদেশে বিস্তৃতভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এই অ্যাপটির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে সিএইচসিপি, স্যাকমো এবং সংশ্লিষ্ট সকল স্বাস্থ্যকর্মীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। 

সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত বলেন, আইএমসিআই অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অ্যাপটি রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং রেফারেল প্রক্রিয়ায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ এবং আমরা এই বাস্তবায়ন গবেষণা থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সচেষ্ট আছি।

তিনি আরও বলেন, একই ধরনের উদ্যোগে আরও অর্থায়নের জন্য আমরা দাতাদের কাছে আবেদন করব। বরিশাল বিভাগে এই অ্যাপের বাস্তবায়ন সম্ভব করায় এবং সফলভাবে তা প্রয়োগে সহযোগিতার জন্য আমরা সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গর্বিত ও কৃতজ্ঞ।

সমাপনীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সেভ দ্য চিলড্রেন সারাদেশে মানসম্মত শিশুসেবা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল উদ্ভাবন সম্প্রসারণে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। তারা জানায়, ‘সমন্বিত শিশুরোগ ব্যবস্থাপনা অ্যাপ’ বাংলাদেশের জাতীয় আইএমসিআই গাইডলাইন অনুযায়ী তৈরি একটি ডিজিটাল টুল, যা ০–৫ বছর বয়সী শিশুদের সাধারণ রোগ: নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টি, জ্বর, কানের সংক্রমণ ইত্যাদির শ্রেণিবিন্যাস, চিকিৎসা ও রেফারেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করে।

গবেষণা বলছে, এই ডিজিটাল রূপান্তর শুধু শিশুসেবা নয়, বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ ও তথ্যনির্ভর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।