যোগ্য পদে যুক্ত হতে পারেন না ৪৫ শতাংশ বায়োটেক গ্র্যাজুয়েট

১ নভেম্বর, ২০২৫ ০১:০৭  
যোগ্য পদে যুক্ত হতে পারেন না ৪৫ শতাংশ বায়োটেক গ্র্যাজুয়েট

বিশ্বজুড়ে চাকরি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র হিসেবে সম্ভাবনাময় গণ্য হলেও বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজির চাকরিক্ষেত্র সেভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না। এমনকি যোগ্যাতা থাকার পরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানলব্ধ এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদে চাকরিতে আবেদন পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না।  ফলশ্রুতিতে দেশে প্রতিবছর যে ১৭০০ বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েট স্নাতক পাশ করেন, তাদের ৪৫ ভাগই বিষয় সংশ্লিষ্ট কোনো চাকরিতে যুক্ত হতে পারছেন না। একইভাবে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিষয়ের স্নাতকদের আবেদন করতেই দেওয়া হয় না। অন্যদিকে দেশের ৫০ ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োটেকনোলজির সিলেবাস ও পঠনপদ্ধতি সম্পর্কে না জানায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিশেষায়িত এই শিক্ষার্থীদের অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেই আবেদন করতে দেয়া হয় না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে ৩১ অক্টোবর, শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত চাকরিক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে এমনটা তুলে ধরলো নেটওয়ার্ক অব ইয়ং বায়োটেকনোলজিস্টস অব বাংলাদেশ (এনওয়াইবিবি)। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এমন ‘বিষম-চিত্র’ তুলে ধরেন এই সমস্যা দূরীকরণে কী করা যায় সেই প্রশ্নই বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সামনে ছুঁড়ে দিলেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক এনওয়াইবিবি- এর পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।

জবাবে ওয়ান স্টপ সলুশান হিসেবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিকে কার্যকর ভূমিকা পালন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সভার অতিথি বক্তা এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির অবস্থান তুলে ধরে ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে বায়োটেকনোলজি কে পরিচিত করাতে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম।

মূলপ্রবন্ধে উঠে আসা তথ্য-উপাত্ত উদ্বেগের  এবং এই অবস্থার উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে বাধাগুলো দূর করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান বক্তা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ ছগীর আহমেদ। 

বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির অবস্থান তুলে ধরে ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে বায়োটেকনোলজি কে পরিচিত করাতে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. মুশতাক ইবনে আয়ুবের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ারুল আজীম আখন্দ এবং গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান। 

আলোচনায় বায়োটেকনোলজির গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন চাকরিক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং বর্তমানে নানা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুমাইয়া ফারাহ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বায়োটেক কোম্পানির সিইও এম এ ওয়াদুদ, আইইডিসিআর এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফ খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহমুদা কবির, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম সিজান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সরূপ হাসান।

অতিথিরা এসব সংকট নিরসনে  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেন এবং একই সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বায়োটেকনোলজির পাঠ্যক্রম এবং ব্যবহারিক দক্ষতা সম্পর্কে অবহিত করার প্রয়োজনীয় দিক তুলে ধরেন।

গোলটেবিল আলোচানায় সহযোগী ছিলো বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটস (BABG) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ক্লাব এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল বায়োটেক কনসার্ন।