মোবাইল অপারেটরদের জন্য নতুন সিএমএসপি গাইডলাইন প্রকাশ

নতুন গাইডলাইনে কী সুযোগ থাকছে মোবাইল অপারেটরদের?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:০৯  
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:১০  
নতুন গাইডলাইনে কী সুযোগ থাকছে মোবাইল অপারেটরদের?

প্রযুক্তি নিরপেক্ষ হয়ে ৫জি ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সেলুলার নেটওয়ার্ক সেবা বাস্তাবায়নে এবার সেলুলার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স (সিএমএসপি) গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এলডিটিএস পলিসি-কে ছুটিতে পাঠিয়ে সম্প্রতি গেজেট হওয়া টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি’র অধীনে নতুন নির্দেশিকার খসড়াটি প্রকাশ করা হয়েছে বিটিআরসি’র ওয়েব সাইটে। খসড়া সম্পর্কে মতামত দিতে সময় বেধে দেয়া হয়েছে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

৩০ পৃষ্ঠার ওই খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কমিশন মোবাইল সেবার লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও তদারকিতে একচ্ছত্র ক্ষমতা রাখে। নতুন গাইডলাইনটি বর্তমান অপারেটরদের প্রযুক্তি নিরপেক্ষভাবে সেবা সম্প্রসারণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশিকায় ২জি থেকে ৫জি এবং ভবিষ্যতের “IMT for 2020 and beyond” প্রযুক্তির জন্য একই লাইসেন্স প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ অপারেটররা আর আলাদা প্রযুক্তির জন্য আলাদা অনুমোদন নিতে হবে না। পাশাপাশি ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), মেশিন-টু-মেশিন (M2M) এবং স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট হোম সংক্রান্ত সেবাগুলোকেও আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্সের আওতায় আনা হয়েছে। 

নতুন সিএমএসপি লাইসের্সিং গাইডলঅইনে দেশীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বিদেশি বিনিয়োগ সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশে সীমিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় অংশীদারিত্ব ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। 

১৫ বছর মেয়াদী এই লাইসেন্সে আইওপি, ৫জি প্রযুক্তির ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), এবং ফোরকে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য eMBB ও প্রচুর সংখ্যক ডিভাইস (ইন্টারনেট অফ থিংস বা IoT) যেন একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে সেজন্য mMTC র পাশাপাশি Fixed Wireless Access (FWA) ও অন্যান্য আধুনিক সেবা চালুর অনুমতিও দেয়া হয়েছে।   ছাড়াও নতুন গাইডলাইনে দেশীয় ইন্টারকানেকশন ও ইন্টারনেট পিয়ারিং ব্যবস্থার জন্য “নিউ ফ্রেমওয়ার্ক” চালুর কথা বলা হয়েছে। এতে বর্তমান আইসিএক্স (ICX) ও এনআইএক্স (NIX) ব্যবস্থার পরিবর্তে অপারেটররা সরাসরি আন্তঃসংযোগ স্থাপন করতে পারবে। তবে বিটিআরসি’র অনুমোদন ও তদারকির আওতায় থাকতে হবে।

বিনিময়ে বার্ষিক লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। লাইসেন্সিং গাইড লাইন অনুযায়ী, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের মতো মোবাইল অপারেটরদের বার্ষিক মোট আয়ের ওপর রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে একই ৫.৫ শতাংশ হারে। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলেও দিতে হবে বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে অপারেটরকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে নবায়নের আবেদন করতে হবে। বর্তমানে যেসব কোম্পানি ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নিলামের মাধ্যমে স্পেকট্রাম পেয়েছে, তাদের বিদ্যমান মেয়াদ বজায় থাকবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতের শর্তে লাইসেন্সধারীকে অনলাইন ও অফলাইন Lawful Interception (LI) সিস্টেমে সংযুক্ত থাকতে হবে। অবৈধ কল টার্মিনেশন প্রতিরোধে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি কমপক্ষে ২ বছরের জন্য কল ডেটা, ট্রাফিক লগ ও গ্রাহক তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি অপারেটরকে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রকাশ করতে হবে গ্রাহক চার্টার। প্রতিটি অপারেটরের গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তির রেকর্ড ২ বছরের জন্য সংরক্ষণ রাখতে হবে। সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করে ৫ বছরের মধ্যে ৫ শতাংশ নেটওয়ার্কে সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। বরাবরের মতোই রয়েছে বাজার প্রতিযোগিতার (এসএমপি) ভারসাম্য রক্ষার কথাও। 

নতুন নীতিমালা বিষয়ে জানতে টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে টেকজায়ন্টদের বা বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন সুযোগ যেমন সীমিত হয়েছে তেমনি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগও রাখা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, পলিসির অনেক সুযোগই নতুন গাইডলাইনে বাদ দেয়া হয়েছে। 

নতুন লাইসেন্সিং নির্দেশিকা আইএসপিদের জন্য সুযোগ; না মৃত্যুঘন্টা?