১৬ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হচ্ছে এনইআইআর

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১৪:২২  
৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ০০:২১  
১৬ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হচ্ছে এনইআইআর

জাতীয় ভাবে দেশে ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ‘পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু হচ্ছে’ কয়েক বছর ধরে আটকে থাকা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারের (এনইআইআর)। সেবাটি চালুর ফলে মোবাইল ফোনে লেনদেন বা এমএফএস জালিয়াতি, ইকেওয়াইসি জালিয়াতি, সিম প্রতারণা ও স্ক্যাম প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি টেলিকম খাতের নিরাপত্তা ও রাজস্ব সুরক্ষা অটুট হবে বলে মনে করছে এই সেবার দায়িত্বে থাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। 

২৯ অক্টোবর, বুধবার বিটিআরসি’র সম্মেলন কক্ষে এই ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। 

তিনি বলেন, যরা এমএফএস প্রতারণা, স্ক্যাম বা ডিজিটাল জালিয়াতি এবং যৌন হয়রানির ঘটনার বেশিরভাগই ঘটে মোবাইলফোন ব্যবহার করে। একজনের নামে বেশি সিম থাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ৭৩ শতাংশ এমএমএস প্রতারণা হয় অবৈধ মোবাইলফোন ব্যবহার করে। 

তিনি আরো বলেন, এটি ব্যবহার করলে মোবাইল ছিনতাই কমবে। সরকারের হারানো ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা যাবে। এনইআই আর চালু হলে গ্রে হ্যান্ডসেট বন্ধ করে দেয়া হবে। 

বিটিআরসির তথ্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, বিটিআরসি ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইকেওয়াইসি জালিয়াতির ৮৫ শতাংশ ঘটেছিল অনিবন্ধিত বা পুনঃপ্রোগ্রাম করা হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১ দশমিক ৮ লাখ ফোন চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। এনইআইআর চালু হলে এসব ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করা যাবে। 

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমান অনুযায়ী, অবৈধ ফোন আমদানির কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর কার্যকর হলে এই ক্ষতি রোধ সম্ভব।

বিশেষ সহকারী আশাপ্রকাশ করে বলেন, এনইআইআরের মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। একইসঙ্গে এটি অপরাধ দমনেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ, চুরি বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস সহজেই শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হবে।

ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়, এটি নাগরিকের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি জাতীয় অঙ্গীকার।

এসময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী, স্পকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেন, এমআইওবি প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া শাহীদ, মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব মোঃ জুলফিকারসহ মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধি এবং বিটিআরসি’র কমিশনার ও মহাপরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। 

 অনুষ্ঠানে একটি উপস্থাপন করে যে ভাবে কাজ করে এনইআইআর বিটিারসি'র স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  মো আমিনুল হক জানান, টাওয়ারের অধীনে হ্যান্ডসেটে যুক্ত সিমগুলো হোয়াইট, ব্লাক, গ্রে ও রোমিং ক্যাটাগরিতে বিন্যস্ত হবে। এনইআই চালু হওয়ার আগের সব সেট স্বয়ংক্রিয় ভাবে সিমের বিপরীতে নিবন্ধিত হবে। এতে ক্লোন ও অবৈধ ফোনও নিবন্ধিত হয়ে যাবে। ফোন কাউকে দেয়া হলে ডিরেজস্ট্রেশন করা হবে। বিটিআরসির ওয়েব থেকে পুরো প্রক্রিয়া চলবে। 

আইএমআই বৈধতা যাচাইয়ে ১৬০০২ এবং নিবন্ধনের জন্য ১৬১৬১ এ মেসেজ পাঠাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, এনইআইআর চালু হলে মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং সিম সংক্রান্ত সহজে সনাক্ত করা যাবে । বিদ্যমান টেলিকম নেটওয়ার্ক পলিসির আলোকে গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান দেশে ৩৮ ভাগ ফিচার ফোন ব্যবহার হচ্ছে তাই স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে সব ধরণের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। চোরাই ও রিফাবরিসড হ্যান্ডসেট বাজারে থাকায় মোবাইল ফোনের দাম কমছেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এনইআইআর চালু হলে দেশীয় ১৮টি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে পারবে।  তিনি জানান, এনইআইআর-এর মাধ্যমে মোবাইলে যে সিম ব্যবহার করা হবে, তার তথ্যও পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ট্রেস করা সম্ভব হবে।

এনইআইআর সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ধন্যবাদ জানিয়ে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, এই উদ্যোগের ফলে দেশের বৈধ আমদানিকারক ও স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ পাবে। যা পুরো শিল্পকে একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা যেমন নিরাপদ ও নিবন্ধিত হ্যান্ডসেট ব্যবহারে নিশ্চয়তা পাবেন, তেমনি রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হয়ে সরকারের আয় বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ কেবল আইনশৃঙ্খলা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার দিক থেকে নয়, প্রযুক্তি খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে মোবাইল অপারেটররা এনইআইআর বাস্তবায়নে দৃঢ় রয়েছেন উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, দেশীয় মোবাইল উৎপাদনকারীরা এখন আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। কারণ, তাদের উৎপাদিত হ্যান্ডসেট বাজারে সুরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর ও খুচরা বিক্রেতারাও একটি পরিচ্ছন্ন বাজার ব্যবস্থার অংশীদার হতে পারবে। আর এনইআইআর বিষয়ে জনসাধারণকেও অবগত করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।