শেষ হলো আইআরও বাংলাদেশ ওপেন ২০২৫-এর জাতীয় পর্ব

রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী আয়োজনের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড (আইআরও) বাংলাদেশ ওপেন ২০২৫-এর জাতীয় পর্ব। দেশের প্রায় ৪০টি জেলা থেকে রোবট বিষয়ে আগ্রহী স্কুল কলেজের প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থী এককভাবে বা দলীয়ভাবে এই অলিম্পিয়াডে নিবন্ধন সম্পন্ন করে। অনলাইন বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে জাতীয় পর্বে। আগামী ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে অনুষ্ঠিতব্য ২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড (আইআরও)-তে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে শুক্রবার ও শনিবার দুইদিন জুড়ে অন্বেষণ করা হয় বাংলাদেশ দল।
ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরিতে সিনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে ওয়াইডাব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসাইবা তাজরিন তানিশা, ফিজিক্যাল কম্পিউটিং ক্যাটাগরিতে সিনিয়র গ্রুপে স্বর্ণপদক পেয়েছে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাফিয়া বাসার সুহানী, এবং রোবটিকস কুইজ ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রুপে গোল্ড মেডেল অর্জন করেছে সানিডেল স্কুলের শিক্ষার্থী সারিম শরীফ।
এছাড়াও প্রতি ক্যাটাগরিতেই সিলাভারপদক ও ব্রোঞ্জপদক সহ মোট ২০ জন শিক্ষার্থীকে পদক দেয়া হয় এবং ৩ জন শিক্ষার্থীকে সম্মানজনক স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই বছরের মূলথিম ছিল “স্পেস রোবট”।
অভিভাবকরা এই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডকে তাদের সন্তানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এখানে শিক্ষার্থীরা শুধু সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে না, বরং দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করার এক অনন্য অভিজ্ঞতাও অর্জন করছে। এই পর্যায়ে অংশগ্রহণ করা তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, “এখানে অংশগ্রহণ করে আমার মেয়ে অনেক কিছু শিখছে। রোবট তৈরি করার কৌশল থেকে শুরু করে দলগতভাবে কাজ করা, সময় ব্যবস্থাপনা আর নতুন ধারণা গ্রহণ, সবই তার শেখার অংশ হয়ে উঠছে।”
১৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার বিকেল ৫টায় শুরু হয় বর্ণাঢ্য সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান। তিনি এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “এই আয়োজন প্রমাণ করে শেখার আসল জায়গা কেবল শ্রেণিকক্ষ নয়, বরং অভিজ্ঞতার ভেতর লুকিয়ে থাকে সত্যিকারের শিক্ষা। আজকের তরুণরা এখানে অংশ নিয়ে শুধু প্রতিযোগিতাই করছে না, তারা নিজেরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলছে। আমি মনে করি, এখান থেকেই তারা আগামী দিনের সমাজ ও বিশ্বকে বদলে দেওয়ার প্রেরণা খুঁজে নেবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) মোঃ আবু সাঈদ। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ডাটাসফট সিস্টেম-এর প্রেসিডেন্ট জনাব এম মঞ্জুর মাহমুদ, ভিভাসফট-এর কো-ফাউন্ডার জনাব শাফকাত আসিফ, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি মুনির হাসান এবং আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে দল নির্বাচনী ক্যাম্প। ঐ ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে গঠিত হবে বাংলাদেশের জাতীয় দল যারা আগামী ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে আয়োজিত ২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে (আইআরও) দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৭টায় রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শুরু হয় দুইদিনব্যাপী এই আয়োজন। প্রথমদিন অনুষ্ঠিত হয় ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি এবং ফিজিক্যাল কম্পিউটিং প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয়দিন অনুষ্ঠিত হয় ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি আয়োজন করা হয় একটি রোবটিক্স কুইজ প্রতিযোগিতা। যদিও এটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অংশ নয়, তবে শিক্ষার্থীদের রোবটিক্স বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য এ আয়োজন বিশেষ মাত্রা যোগ করে।
উল্লেখ্য, মূল প্রতিযোগিতার পূর্বে দেশের আটটি বিভাগে আয়োজন করা হয় অ্যাক্টিভেশন কর্মশালা। এসব কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা রোবোটিকসের মৌলিক ধারণা, প্রতিযোগিতার কাঠামো এবং অংশগ্রহণের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। একই সঙ্গে হাতে-কলমে কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের আগ্রহ ও কৌতূহল বাড়ানো হয়।
আইআরও বাংলাদেশ ওপেন ২০২৫ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। আয়োজনের পার্টনার হিসেবে রয়েছে দেশের শীর্ষ কিশোর ও বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকা কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা, এবং প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্লাউড নাম্বার ২৪।