ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক সত্যায়ন

মাইগভে ১০ মাসে ১০ লক্ষ ই-এপোস্টিল

২১ আগষ্ট, ২০২৫ ১৪:৩৩  
২১ আগষ্ট, ২০২৫ ১৬:২৮  
মাইগভে ১০ মাসে ১০ লক্ষ ই-এপোস্টিল

বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরির আগে কাগজপত্র সত্যায়নে লাইনে না দাঁড়িয়ে দালালের খপ্পর আর অতিরিক্ত খরচ বাঁচাচ্ছে  সরকারি সেবার একক পোর্টাল মাইগভ (myGov)-এর ইলেকট্রনিক এপোস্টিল (ই-এপোস্টিল)। প্রযুক্তির এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে গত দশ মাসে ১০ লক্ষের বেশি এপোস্টিল হয়েছে বলে জানাগেছে। সূত্রমতে, ই-সত্যায়নের সবচেয়ে বেশি সত্যায়িত হয়েছে বিদেশের পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সনদ সত্যায়নে।

জানাগেছে, মাইগভের এই ই-সত্যায়ন প্লাটফর্মে ৪৩ ধরনের ডক্যুমেন্ট ঘরে বসেই সত্যায়িত করতে পারছেন নাগরিকেরা। গত ১৭ আগস্ট ১০ মাসে এই সেবটি ১০ লাখ সত্যায়নের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গড় দৈনিক ৩,৫০০ টির বেশী আবেদন আসছে সত্যায়নের জন্য। এরমধ্যে অ্যাপের থেকে ওয়েবেই বেশি আবেদন আছে।

সূত্রমতে, গত বছরের ১ অক্টোবর ই-এপোস্টিল-তে ১১টি শিক্ষা বোর্ড সংযুক্ত হয়। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর  দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ইনস্টিটিউট এর অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে সব জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ যুক্ত হয়। ফলে ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্র, জন্মনিবন্ধন, বিবাহ সনদ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ বহু ধরনের নথি এখন ঘরে বসেই অনলাইনে এপোস্টিল করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব মোঃ রশিদুল মান্নাফ কবীর বলেন, “এই ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে নাগরিকগণ ঘরে বসেই স্বল্পতম সময়ে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও কম খরচে সনদপত্র সত্যায়নের সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন। পূর্বে যেখানে ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় প্রতি ডকুমেন্টে ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতো, বর্তমানে সেখানে অনলাইনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ২০০ টাকা ফি প্রদানের মাধ্যমে একই সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় হতে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টসমূহের জন্য এ সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থী, প্রবাসী ও বিদেশে কর্মরত পেশাজীবী—সবাই এ সেবা থেকে সমানভাবে উপকৃত হচ্ছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা ভিসা-সম্পর্কিত সময়সীমা মেনে দ্রুত নথি জমা দেওয়া সহজ হয়েছে; জন্মনিবন্ধন, বিবাহ সনদ কিংবা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ পরিবার-সম্পর্কিত নথির অনলাইন সত্যায়নও এখন আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ঝামেলামুক্ত। সামগ্রিকভাবে ই-এপোস্টিল বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ—যেখানে নাগরিকের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে, সেবার মান ও স্বচ্ছতা বেড়েছে, এবং এক ক্লিকেই আন্তর্জাতিক দরজায় কাগজপত্র তুলে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।“

প্রসঙ্গত, এপোস্টিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সত্যায়ন পদ্ধতি, যা জন্মনিবন্ধন, শিক্ষাগত সনদ, বিবাহ সনদের মতো সরকারি দলিল বিদেশে গ্রহণযোগ্য করতে প্রক্রিয়াটি সহজ করে। নেদারল্যান্ডসের হেগ-এ স্বাক্ষরিত ১৯৬১ সালের এপোস্টিল কনভেনশনে পক্ষভুক্ত ১১৪টি দেশ বাংলাদেশের এপোস্টিলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই কনভেনশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ। একই বছরের অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে অনলাইনে সেবা চালু করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মাইগভ পোর্টালে ই-এপোস্টিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর সেবাটি জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত হয়।

মাইগভ সূত্রে প্রকাশ, সেবাটি সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্বচ্ছ ও পুরোপুরি ডিজিটাল ধাপে—মাইগভে আবেদন ও নথি আপলোড, ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের যাচাই, নিয়ন্ত্রক দপ্তর, মন্ত্রণালয়ের অনলাইন সত্যতা নিশ্চিতকরণ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সাইন ও কিউআর কোডসহ ই-এপোস্টিল ইস্যু। প্রতিটি নথির কিউআর কোড স্ক্যান করে বিদেশের সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি অনলাইনে যাচাই করতে পারে—ফলে জালিয়াতির সুযোগ কমে, আস্থা বাড়ে। সময়সীমা ও খরচ—দুই দিক থেকেই এটি নাগরিকবান্ধব। আগে যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দপ্তর ও দূতাবাসে বহুবার যেতে হতো, এখন তা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ কার্যদিবসে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। আবেদন, ট্র্যাকিং ও নথি জমা—সব এক প্ল্যাটফর্মে; মাইগভের সহায়তা ফরম ও ৩৩৩ হেল্পলাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তাও মিলছে দ্রুত।