২০তম বিআইজএফ এ বক্তারা

ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা হোক টেকসই, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও ইনসাফ ভিত্তিক

৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:১৯  
ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা হোক টেকসই, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও ইনসাফ ভিত্তিক

ইন্টারনেটের অর্থপূর্ণ ও যথার্থ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে টেকসই ও অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা ও নাগরিকদের প্রশিক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন আধুনিক ইন্টারনেটের জনক খ্যাত গুগল’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চিফ ইন্টারনেট ইভানজেলিস্ট ভিনট সার্ফ। 

৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের (বিআইজিএফ) ২০ তম সম্মেলনের উদ্বোধনীতে দেয়া ভার্চুয়াল বার্তায় এই পরামর্শ দেন তিনি। 

বাংলাদেশে ডিজিটাল সুশাসন, সাইবার নিরাপত্তা ও যুব অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ফোরামের উদ্বোধনী বক্তব্যে ভিনটন জি সার্ফ বলেছেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ইউজফুল ও মিনিংফুল ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়া  সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে বিকশিত হচ্ছে ভবিষ্যতের অর্থনীতি। ফলে শিক্ষা, বিনোদন ও ব্যবসায় প্রসার সবক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। ইন্টারনেট নির্ভর পণ্য ও সেবার পরিধি দিন দিন বাড়বে। এক্ষেত্রে ফিজিক্যালের মতো ডিজিটাল অবকাঠামো প্রতিষ্ঠায়ও বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি অবকাঠামো হতে হবে ইন্টানেট ও প্রযুক্তি ভিত্তিক অবকাঠামোটি এমন ভাবে করতে হবে তা যেন সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে। পাশাপাশি নাগরিকদেরকেও এসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার এবং ক্লাউড ভিত্তিক সেবা ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। 

বাংলাদেশের ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এই সেশনটি সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মিনহাজ উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিজিটাল গণতন্ত্রায়ণ বিশেষজ্ঞ এবং দায়িত্বশীল কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা অ্যাম্বাসেডর এ এইচ এম বজলুর রহমান। 

অন্তর্ভূক্তিমূলক ও বুদ্ধিদিপ্ত ক্ষমতায়নে ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থার রূপরেখা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মু. হাকিকুর রহমান। সেখানে তিনি বলেন, ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা। এটি হতে হবে উদ্ভাবন ও অন্তর্ভূক্তিমূলক। একই সঙ্গে ইনসাফ ভিত্তিক।  

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) এর বাংলাদেশী প্রতিনিধি শারমিন খান নাগরিকের কল্যাণে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা এবং এআই নীতিমালার ওপর আলোকপাত করেন।  বক্তেব্যে বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (বিন) চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমাস কবির অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল সেবা বাড়ানো ও নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, শুধু ইয়্যুথ ডেভিডেন্ড থাকলেই চলবে না। তাদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে। স্কিল গ্যাপ অ্যানালাইসিস করে জাতীয়ভাবে একটি স্কিল পুল তৈরি করতে হবে। সবার জন্যই আপস্কিল-রিস্কিলে মনোযোগী হতে হবে। ইন্টারনেটে কি করা যাবে বা যাবে না সে বিষয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।   

বক্তব্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি চিন্তার স্বচ্ছতার ওপর জোর দেন এপনিক নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, স্টারলিংক কোনো সমাধান নয়। ইন্টারনেট শাটডাউন বন্ধে রাজনৈতিক মতৈক্যের পাশাপাশি আপদকালীন ব্যবস্থাপনাতেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।  

এর আগে বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনুর সঞ্চালনায় তরুণদের জন্য ইন্টারনেট নির্ভর নানা ফেলোশিপ নিয়ে আলোকপাত করেন আইকান এর গ্লোবাল স্টেকহোল্ডার এঙ্গেজমেন্ট ম্যানেজার ইয়াস আগারওয়াল। একই প্রসঙ্গে কিভাবে সহজেই আকান থেকে ফেলোশিপ এবং ফান্ডিং পাওয়া যায় সে বিষয়টি উপস্থিত তরুণদের সামনে তুলে ধরেন আইসক বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ কাউছার উদ্দীন।  

আলোচনায় অংশ নিয়ে নেটমিশন অ্যাম্বাসেডর আশিকুর রহমান শুন্য জানালেন, আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে নেট মিশনের ফেলোশিপ প্রোগ্রাম। এজন্য ২ নভেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। ফেলোশিপ পেতে আবেদন করতে পারবেন ৩০ বছরের কম বয়সীরা।  

তরুণদের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ ও এআই অন্তর্ভুক্তি বিষয়টিকে সামনে রেখে শুক্রবারের প্রথম সেশনে আলোচনার বিষয় “নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য তরুণদের কণ্ঠস্বর”।  বাংলাদেশ ইয়ুথ আইজিএফ চেয়ারম্যান সৈয়দা কামরুন জাহান রিপার সভাপতিত্বে এই সেশনে প্রধান বক্তা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক রিদমা খান।

পরবর্তী সেশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদরা। বিকেলে কৃষক ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন বিষয়ে বক্তৃতা দেন জারিন তাসনিম রাফা ও সানজিদা তাসনিম।
দিনের শেষ সেশনটি হবে সাইবার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিষয়ে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল-এর মাহেদী হাসান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সমপানী দিনটি শুরু হবে শিশু নিরাপত্তা ও অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা দিয়ে। সকালে ‘স্মার্ট কিডস, সেফ ইন্টারনেট’ শীর্ষক কর্মশালায় স্কুল শিক্ষার্থীরা দলভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিয়ে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে। দেখানো হবে নিরাপদ থাকার কৌশল।

পরবর্তী অধিবেশনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) ও UN Women-এর প্রতিনিধিরা। এর পর থাকছে  মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাইবার আইন বিষয়ক আলোচনা। দুপুরের আলোচনায় ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মো. আল আমিন তুষার। গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষায় ডিজিটাল যাচাইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এএফপি’র ডিজিটাল ভেরিফিকেশন সম্পাদক মো. ইয়ামিন।

সমাপনী অধিবেশনে মূল বক্তা ছিলেন এ.এইচ.এম. বজলুর রহমান, আর সভাপতিত্ব করবেনন মো. সায়মুম রেজা তালুকদার। সংহতি ভাষণ দেবেন জাতিসংঘ আইজিএফ সচিবালয়ের কর্মকর্তা আঞ্জা জেনগো।