সিলেট টু ইউরোপ কার্গো ফ্লাইটের সূচনা

শেষ পর্যন্ত সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বিমানে করে ছেড়ে গেলো বহুল প্রতিক্ষিত কার্গো ফ্লাইট। এর মাধ্যমে আকাশ পথে ইউরোপে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সিলেট তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হয়েছে নতুন অধ্যায়। একইসঙ্গে দিল্লি, ব্যাঙ্গালুর ও কলকাতা এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে আমাদের ব্যবসায়ীদের যে টাকা খরচ হতো তার চেয়েও আরও কম খরচে যাবে কার্গো ফ্লাইটে রফতানি হবে দেশের পণ্য।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশ্যে উড়াল দিয়েছে এয়ারবাস ৩৩৭ মডেলের বাংলাদেশ বিমানের কার্গো ফ্লাইট। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। এছাড়া এসময় বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দসহ সিলেটের রাজনৈতিক সামাজিক অঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ফ্লাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আজ সিলেটবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতার পর ঢাকার বাইরে এই প্রথম একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্গো ফ্লাইট চালু হয়েছে। এটি কারো একার কর্তৃত্ব নয়, সিভিল এভিয়েশনও এখনে প্রচুর কাজ করেছে। রানওয়ের সক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে এয়ারপোর্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করেছ। আজকের সাফল্য কোনোভাবেই আমাদের গন্তব্য নয়। এটি আমাদের যাত্রা।
ঢাকা-সিলেট রুটে বাণিজ্যিক সার্ভিসে ৩৭ শতাংশ ব্যয় কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যাতায়াতে খরচ কমেছে ১৩ শতাংশ। ফ্যাসিস্ট আমলের সৃষ্ট সমস্যাগুলো সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকায় আমরা সমাধান করতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর আজই প্রথম ঢাকার বাহিরে থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এটি সিলেটবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়া নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।তবে আমি এটাতে সন্তুষ্ট নয়। আমি এর থেকে আরও বেশি চাই।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, আমরা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। একসময় এই মালামালগুলো অন্যদেশে গিয়ে এই বিমানের কার্গো হতো। কিন্তু এখন আর অন্যদেশে যেতে হবেনা, আমরা নিজেদের দেশ থেকেই কার্গো করব। আমি আশা করি আপাতত সিলেট থেকে সপ্তাহে অন্তত ২টি কার্গো ফ্লাইট হবে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক খন্দকার শিপার আহমদ, যমুনা ওয়েল লিঃ এর পরিচালক সালেহ আহমদ খছরু, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী ও এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ প্রমূখ।
এর আগে- প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। কার্গো ফ্লাইট চালুর জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারসহ সবধরনের প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছেড়ে যাওয়া ১ম কার্গো ফ্লাইটে শুধু গার্মেন্টস পণ্য বহন করা হয়েছে। এতে কোনো যাত্রী ছিলনা। কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ায় ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানিতে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের জন্য নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করেন সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।