ওএসডি হলেন বিটিআরসি’র ৬ কর্মকর্তা

২৮ আগষ্ট, ২০২৫ ১৪:০৪  
২৯ আগষ্ট, ২০২৫ ০০:০৯  
ওএসডি হলেন বিটিআরসি’র ৬ কর্মকর্তা

নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগে ৬ কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেছে বিটিআরসি। এরা হলেন, মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগ) আশীষ কুমার কুণ্ডু, পরিচালক এম এ তালেব হোসেন, পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদ, পরিচালক মো. এয়াকুব আলী ভূইয়া, উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান এবং উপ-পরিচালক বেগম শারমিন সুলতানা।

গত ৩০ জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিটিআরসি-কে অভিযুক্তদের ওএসডি করারা নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়াও অভিযুক্ত প্রত্যেককেই আলাদা করে ওএসডি এর চিঠি দেয়া হয়েছে। 

সূত্রমতে, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্ত হয়ে তারা বর্তমানে  অফিস করলেও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ক্ষমতা সাময়িকভাবে রহিত করা হয়েছে। শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত এই নিয়ম বহাল থাকবে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, নিয়োগ কমিটির সুপারিশ ও কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে ২৯ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয় তার মধ্যে ১৫ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে আবেদন করার ও নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া এই ২৯ জনের মধ্যে ১৫ জন ইতিমধ্যেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। 

অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী চুক্তি ছাড়াই বিটিআরসির কমিশনার পদে চাকরি করছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিটিআরসির সাবেক কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী সরকারের সাথে চুক্তি সম্পাদন না করে কমিশনার হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন যা নীতিবহির্ভূত। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে পত্র প্রেরণ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ কারণে তিনি বেতন-ভাতা বাবদ যে টাকা নিয়েছেন, তা ফেরত আনার ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু কমিশন সভার সুপারিশ ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাববিহীন সিদ্ধান্ত চেয়ে পত্র, যোগাযোগে সময়ক্ষেপণ, সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রেরণ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব ছাড়াই তিনি ওই চিঠির জবাব দেন তিন মাস পর ২১ ডিসেম্বর।

এছাড়াও পরিচালক এম এ তালেব উপপরিচালক (পদ্ধতি ও সেবা) পদে অনধিক চার বছরের চাকরির স্থলে তিন বছর ২৬ দিন পূরণ করেন। এক্ষেত্রে বিটিআরসি’র চাকরি প্রবিধিমালা ২০০৯ (সংশোধিত) এর প্রবিধান ১১ এর ১ লঙ্ঘন করা হয়েছে। অডিট রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের পরিচালক এম এ তালেব হোসেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের আপন ভাতিজা। সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেসের উপপরিচালক থেকে এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড ইন্সপেকশন বিভাগে পরিচালক পদে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পদোন্নতি বাগিয়েছেন। সরকারের অডিট অধিদফতর এ অনিয়ম বাতিল করে অতিরিক্ত বেতন ফেরতের সুপারিশ করলেও বাস্তবে তা উপেক্ষিত হয়েছিলো। 

পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদ ৪ বছর চাকরির মেয়াদ পূর্তির আগেই ১ বছর ২২ দিন চাকরি করে পদন্নতি পেয়েছেন। একইভাবে পরিচালক মো. এয়াকুব আলী ভূইয়া উপ-পরিচালক পদে ৬ মাস ১ দিন চাকরি করে পরিচালক পদে পদন্নতি পেয়েছেন। 

এছাড়াও উপপরিচালক আসাদুজ্জামানের বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। উপ-পরিচালক বেগম শারমিন সুলতানা প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নির্ধারিত বয়স না হওয়া সত্ত্বেও সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন এবং নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তার চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদন্নতি দেয়া হয়েছে।