জিপি হাউসের সামনে বিক্ষোভ

‘মে দিবস’, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। ছুটির এই দিনটিতে নানা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকে শ্রমিক সংগঠনগুলো। প্রতি বছর এই দিনটিতে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে থাকে নানা আয়োজন। সেই ধারাবাজিকতায় ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ প্রত্যয়ে দিবসটি পালন করছে দেশ।
দিবসটিতে যথারীতি বসুন্ধরা আবাসিকের প্রবেশমুখে জিপি হাউসের তালাবদ্ধ সীমানার বাইরে বিক্ষোভ করছে 'গ্রামীণফোন ৫% বিলম্ব বকেয়া আদায় ঐক্য পরিষদ'। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে লাল কাগজে সাদা কালিতে লেখা পোস্টার বুকে নিয়ে সমাবেশ করেন অর্ধশতাধিক সাবেক কর্মী। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় পোস্টারে লেখা ছিলো- ‘পহেলা মে শ্রমিকদিবসের শপথ ‘২৫ ফেব্রুয়ারির রক্ত, চোখের জল বৃথা যাবে না, ৫% ছাড়বো না’; ৫% অনুদান নয়, অধিকার’ এবং গ্রামীণফোনের নির্দেশে শ্রমিকের ওপর পুলিশী হামলার ধিক্কার।
মাথায় লাল কাপড় বেধে জ্বালাময়ী ভাষায় তারা গ্রামীণফোন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে হুশিয়ারি দিয়েছেন- “আমরা জীবাশ্ম নই — চার হাজার জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি"; যারা অপেক্ষা করতে করতে জ্বলে উঠছি বারবার। আগুন হয়ে। এই স্বাধীন বাংলার মানুষ যদি মনে করে গ্রামীণফোনের বিজনেস ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গুটিয়ে নিয়ে চলে যেতে হবে।” মায়ানমার থেকে গ্রামীণফোন গুটিয়ে নেয়ার মতো ঘটনার যেনো পুণরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রোদ-গরম উপেক্ষা করেই কার্যালয়ের সামনের ফুটপাখে তারা পাশাাপাশি দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে ক্র্যাচে ভর করেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ এসেছেন কোলের বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে। সাবেক কর্মীরা গানে, কবিতায় ও শক্তিশালী স্লোগানে জানান দেন তাঁদের ক্ষোভ ও আশা—আশা একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাধানের, যেখানে শ্রমিকদের অধিকারকে আর পদদলিত করা হবে না।
সমাবেশ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, নিজেদেরকে বাংলাদেশের একমাত্র কমপ্লায়েন্স কোম্পানি দাবি করে এখন গ্রামীণফোন তাদের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে, জেলে পাঠায়। বাংলাদেশের ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনই এখন গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কমেপ্লেইন করে। সেবার মান ঠিক রাখতে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগে এনে ছাঁটাই করা শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল ও চাকরিচ্যুতরা কর্মীরা, প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার ৫ শতাংশ বিলম্ব জরিমানার দাবির কথা উচ্চারণ করছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চাকরিচ্যুতরা জানান, গ্রামীণফোন একটি দানব প্রতিষ্ঠান। তারা কোনো কারণ ছাড়া কর্মীদের নোটিশ না দিয়েই নিজেদের ইচ্ছেমত কর্মীদের ছাঁটাই করেছে। হঠাৎ করে ই-মেইল পাঠিয়েও একদিনেই অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। দীর্ঘদিন থেকে তারা এই কাজ করে আসছে। গ্রামীণফোনের এই ৫% জরিমানার অর্থ হাজার হাজার সাবেক কর্মীর ন্যায্য পাওনা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই অর্থ আটকে রেখে প্রতিষ্ঠানটি দেখিয়ে দিয়েছে কর্পোরেট অন্যায় কেমন হয়। আজকের এই আন্দোলন রাজনীতি নয়, প্রতিশোধ নয়—এটা টিকে থাকার লড়াই, ন্যায়ের জন্য হৃদয়ের কান্না।