১১ মাস চাকরি করে বেতন মিলেছে ৩ মাসের

চরম অপুষ্টিতে স্বাস্থ্যের আইটি প্রকৌশলীরা; ছাঁটাইয়ের হুমকি

২৩ এপ্রিল, ২০২৫  
২৩ এপ্রিল, ২০২৫  
চরম অপুষ্টিতে স্বাস্থ্যের  আইটি প্রকৌশলীরা; ছাঁটাইয়ের হুমকি

মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে; ধার-কার্যে আর্থিক দুরাবস্থায় একরকম চরম অপুষ্টি দশা হতে চলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অটোমেশন আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার ও তাদের পরিবার। এই কাজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে ২০২৪ সালের মে ও জুন মাসে দুই ধাপে ৫০ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেড। প্রথম তিনমাস তারা দেন-দরবার করে কোনোমতে বেতন আদায় করলেও ১১ মাসের কর্মজীবনের ৭-৮ মাসই বেতন পাননি ৪৮ জন কর্মী।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহেই বনানীর ফ্লোরা টেলিকম অফিসে হাজির হয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যখন কয়েক ঘণ্টাতেও তাদের পাত্তা দিচ্ছিলো না তখন প্রতিষ্ঠানটির বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয় তারা। এরপর বিষয়টি স্থানীয় থানা এবং সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তারা। এরপর এ মাসেই বেতন দেয়ার কথা বললেও সঙ্গে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকী দেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেতন না পেয়ে কর্মীরা যখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন, তখন উল্টো ছাঁটাইয়ের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্য কোথাও চাকরি খোঁজার তাগিদও দিয়েছেন ফ্লোরা টেলিকমের কর্মকর্তারা। অথচ নিয়োগের সময় তাদের কমপক্ষে তিন বছর চাকরির নিশ্চায়তা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি কর্মীদের।

তবে দফায় দফায় সময় নিয়েও তাদের বেতন পরিশোধ করেনি ফ্লোরা টেলিকম কর্তৃপক্ষ। এজন্য তারা গত ২০ এপ্রিল তারা রাজধানীর বনানীতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারপরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। এমনকি এদেরই একজনের স্ত্রী যখন সন্তান সম্ভবা তখনো বকেয়া বেতন দিতেও গা করেনি কর্তৃপক্ষ। অপর একজনের অসুস্থ বাবা-মা-কে নিয়ে চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। বেশির ভাগ প্রকৌশলীই ধার-কর্যে জর্জরিত। কর্মস্থলের বাসা ছেড়ে পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে শেয়ার মেসে থেকে কাজ করছেন। এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অটোমেশন আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়াররা ।  

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের মে মাসের শেষ দিকে ২৭ জন এবং জুনের শুরুতে ২৩ জনকে আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারি পদে নিয়োগ দেয় ফ্লোরা টেলিকম কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিস্টেম অটোমেশনের কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিয়োগপত্র অনুযায়ী—আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়াররা সর্বসাকুল্যে ১৮ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

ফ্লোরা টেলিকমের নির্দেশনা অনুযায়ী—আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়াররা সফটওয়্যারের মাধ্যমে দৈনিক কতজন রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন, কত টাকা আয় হয়, ল্যাবরেটরিতে কতটি পরীক্ষা করানো হয়, সেগুলোর রিপোর্ট দেওয়ার তথ্য-উপাত্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়মিত পাঠানোর কাজ করেন।

 ৮ মাস বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ পাওয়া আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আহমাদ। তিনি ডিজিবাংলটেক-কে বলন, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বেতন দিতে গড়িমসি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা প্রথম তিনমাসের বেতন কোনোমতে দিয়েছিলেন। এরপর ৮ মাস বকেয়া। অনেক বার সময় দিয়েও সেই তারিখে বেতন পরিশোধ করেনি। সবশেষ আমরা প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করি। এরপর তারা আগামী রোববার (২৭ এপ্রিল) কবে বেতন দেওয়া হবে, সেই তারিখ জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

 নিয়োগের চুক্তি না মেনে এখন চাকরিচ্যুত করার আশঙ্কায় দিন গুনছেন এসব কর্মীরা। এ নিয়ে অভিযোগ করে ফয়সাল বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিল, মিনিমাম ৩ বছর চাকরি করতে পারবো। এখন এক বছরের মাথায় দেখছি ৮ মাসের বেতন বকেয়া। আবার আমাদেরকে অন্য কোথাও চাকরি খুঁজতেও বলছে প্রতিষ্ঠান।

 জানতে চাইলে ফ্লোরা টেলিকমের চিফ অপারেটিং অফিসার এস জাওয়াহের আহমেদ বলেছেন, ‘প্রকল্পের কাজ এটা। আমরা কাজটা পেয়েছিলাম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অর্থ ছাড় না করায় আমরা কর্মীদের বেতন দিতে পারিনি। তারপরও তারা যখন এটা নিয়ে মুভমেন্ট করেছেন, তখন আমরা তাদের জানিয়েছি যে, আগামী রোববার (২৭ এপ্রিল) তাদের কবে বেতন দেওয়া হবে বা ভবিষ্যতে তারা কী করবেন; সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

 তিন বছর মেয়াদে নিয়োগ দিয়ে এখন ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের নিয়োগে এমন কথা উল্লেখ করিনি। যাদের চাকরি স্থায়ী করা হবে, তাদের ব্যাপারে এটা প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু এ ৪৮ জনের চাকরি তো স্থায়ী করা হয়নি।’

এমন পরিস্থিতিতে আইনি প্রতিকার দীর্ঘস্থায়ী এবং আদালতের খরচ মেটানোর দুশ্চিন্তায় এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং আইসিটি ও টেলিকম খাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বেতন বঞ্চিত স্বাস্থ্যের আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়াররা।