এসটিএন প্রকল্পে এসাইপি ট্রাঙ্ক প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে নতুন দরপত্র
কম সক্ষমতায় দর বৃদ্ধিতে নতুন সংশয়

মুঠোফোন গ্রাহকের সেবার মানবৃদ্ধিতে কলড্রপ কমিয়ে আনার প্রযুক্তি ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) স্থাপনে ২০২২ সালে উদ্যোগ নেয় সরকার। বিটিসিএল এর অধীনে নেয়া সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এসটিএন) প্রকল্পটি ঘিরে নানা অনিয়মে এরইমধ্যে তিন দফা বাতিল হয়েছে দরপত্র। চতুর্থ বারের মতো দরপত্র প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ১৩ আগস্ট।
তবে এবারেও দরপত্র নিয়ে মিলেছে নয়-ছয় এর চিত্র। সংশোধিত দরপত্রে আইসিএক্সের নূন্যতম ক্যাপাসিটি ৫০ হাজার এসাইপি ট্রাঙ্ক কমিয়ে ৩২ হাজার ৫০০ এসআইপি ট্রাঙ্ক করায় এবারও দরপত্রটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সক্ষমতা কমিয়ে তৃতীয় দফায় বতিল হওয়া দরপত্রে অংশ নেয়া প্রশ্নবিদ্ধ একটি কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতেই এমন উদ্যোগ।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, জিনিউ নামের ওই কোম্পানিটি প্রকল্পের দরপত্র অনুযায়ী ৫০ হাজার এসআইপি ট্রাঙ্ক-এর সক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবী করে বাতিল হওয়া দরপত্রে আবেদন করেছিলো। কিন্তু কারিগরি সক্ষমতায় তাদের সক্ষমতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় কম দরপত্র দিয়েও মূল্যায়ন কমিটির কাছে বাতিল হয়। বাতিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাব কমিটির তৎকালীন সদস্য সচিব শেখ সালেহ আমেদ বলেছেন, ওই সময় আমরা কাগজ পত্রে ত্রুটি পেয়েছিলাম। একইসঙ্গে মূল্যায়ন কমিটিতে জাতীয় স্বার্থে প্রকৌশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষককে মূল্যায়ন কমিটিতে রাখার সুপারিশ করেছিলাম।
মূল্যায়ণ কমিটিতে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কথা স্বীকার করলেও বুয়েট বা কোনো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটিতে কাউকে নেয়ার কথা বলা হয়নি বলে জানান প্রকল্পটির বর্তমান পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। তবে সক্ষমতা অনুযায়ী গত ১৩ আগষ্ট কারিগরী বিনির্দেশ কমিটির আহ্বায়কের কাছে চিঠি দিয়ে আইসিএক্সের নূন্যতম ক্যাপাসিটি ৫০ হাজার এসাইপি ট্রাঙ্ক কমিয়ে ৩২ হাজার ৫০০ এসাইপি ট্রাঙ্ক করার সুপারিশ করা বিষয়ে তিনি বলেন, মহাখালী, এসবিএন, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও সিলেটের মধ্যে মহাখালী স্যুইচ থেকে সর্বোচ্চ ৩২ হাজার ৫০০ কল রেকর্ড অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিনির্দেশে আমি একা সই করলেও এ বিষয়ে বিটিসিএল এমডি ও ডিএমডির সম্মতি রয়েছে। সম্মিতির স্বতন্ত্র কোনো কাগজ না থাকলেও এ নিয়ে নোট আছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চতুর্থ দফায় জমা পড়া দরপত্রের দলিল বলছে,বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃতীয় দফার দরপত্রটি বাতিল হয়েছিলো। এরপর সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে বাতিল দরপত্রটি পুনরায় দরপত্র আহবানের নির্দেশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জুলাই প্রকল্প পরিচালক দরপত্রটি পুণরায় আহবান করে। নতুন দরপত্রটি ২৮ আগস্টে জমা নেয়া হয়। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর পরিচালনা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। পরিচালনা পরিষদ আবারও রুটিন দায়িত্ব হিসেবে দ্বিতীয় দফায় তিন সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান বলেন, আমরা আবারো এ নিয়ে বৈঠকে বসবো।
এসআইপি কমালেও দেখা এবার জিনিউ এক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে! আগে কম মূল্যে কিভাবে বেশি সক্ষমতার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিলো তা থেকেই নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বলেছেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। এখানে আমার একক কোনো বিষয় নেই। বোর্ড যদি মনে করে তবে আবারও নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে লিখিত প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে ফোনে কথা বললেও বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশীদ এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে জনসংযোগ অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।